রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মো. সেলিম। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে রোগী দেখেন সোমবার, মঙ্গলবার। ডাক্তার. সেলিম আসবে এ খবরে এদিন রোগীর ভিড় থাকে হাসপাতালে।
কলেজে সেলিমের মত সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক আছে আরো ৪ জন। এরা রোগী দেখেন না জেনারেল হাসপাতালে। এরা কখন আসে? কখন যায়? এ সম্পর্কে অবগত নয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধু সার্জারী বিভাগ না। অন্য বিভাগগুলোর সবারই অবস্থা একই। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছে ৭১ জন। তথ্যমতে এদের মধ্যে ডাক্তার গৌরব দেওয়ান ছাড়া বাকীরা কেউই থাকেন না রাঙামাটিতে। চট্টগ্রাম থেকে আসা যাওয়া করেন এসব ডাক্তাররা। তাও নিয়মিত নয়।
সর্বশেষ স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা স্ব স্ব এলাকার সরকারী হাসপাতালে সেবা দিবেন। কিন্তু এ নির্দেশনা মানছেন না রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা নিতে ২৪ ঘন্টা রোগী আসে জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালে ডাক্তারের শূণ্যপদ রয়েছে। এমন অবস্থায় দায়িত্বরত ডাক্তাররা রোগী সেবা দিতে হিমশিম খান।
জেনারেলে ডাক্তার সংকটের কারণে দুপুর ১ টার পরে ডিউটিরত একজন মেডিকেল অফিসার আর সেবিকাদের ছাড়া কাউকে পাওয়া যায় না।
সড়ক কিংবা অন্যান্য দুর্ঘটনার কোন রোগীর সার্জারী প্রয়োজন হলে তাকে পাঠাতে হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অথচ মেডিকেল কলেজের একজন সার্জারি ডাক্তার হাসপাতালে সেবা দিলে রোগীদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হত না।
দিনের প্রায় ২৪ ঘন্টাই প্রসবজনিত সেবা নিতে গাইনী রোগী আসে জেনারেল হাসপাতালে। রাঙামাটি মেডিকেলে গাইনী বিভাগের সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক আছেন ৫ জন। এদের মধ্যে মাঝে মধ্যে হাসপাতালে সেবা দেন মৌমিতা ত্রিপুরা। কিন্তু দুপুর ১ টার পর গাইনী ডাক্তার কাউকে পাওয়া যায় না। ফলে এ সময়ে আসা রোগীদের রাঙামাটির বাইরে পাঠানো হয়। অথচ মেডিকেলের ডাক্তারদের মধ্যে পালাক্রমে প্রতিদিন একজন করে গাইনী ডাক্তার জেনারেল হাসপাতালে সেবা দিলে রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হত না।
জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, এমন সময় আসে আমাদের দৈনিক রুটিনের বাইরে গিয়ে হাসপাতালে গিয়ে রোগী সেবা দিতে হচ্ছে। মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন করে হলেও ডাক্তার রাঙামাটিতে থাকলে এটি করতে হত না। আমরা একটু বিশ্রাম পেতাম। মেডিকেল কলেজটি হয়েছে বলে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু মেডিকেলের ডাক্তারদের আমরা পাশে পাচ্ছি না।
মেডিকেলে মেডিসিন বিভাগে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক আছে ৭ জন। এদের মধ্যে ডাক্তার গৌরব দেওয়ানকে পাওয়া যায় রাঙামাটিতে। বাকীরা কেউই রাঙামাটিতে থাকেন না।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মেডিকেলের মেডিসিন, নিউরো, শিশু, চক্ষু, ফিজিও, ইউরোলজি, কিডনী, কার্ডিও, অর্থো, এনেসথেসিয়ার মত গুরুত্বপুর্ণ বিভাগগুলোর বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে অন্তত প্রত্যকটি বিভাগের একজন ডাক্তার পালাক্রমে একদিন করে রাঙামাটিতে অবস্থান করে রোগীর সেবা দিলে রাঙামাটির মানুষ চিকিৎসা সেবা পেত। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ঋভুরাজ চক্রবর্তী বলেন, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন সংকট আছে। এখনো একটি মাত্র ওটি। এ একটি ওটিতে একটি অপারেশন চলাকালে আরেক রোগীকে অপেক্ষা করতে হয়। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারলে তখন রোগীরা সেবা পাবে। এখন হাসপাতালের অবকাঠামোর সংকটের কারণে ডাক্তারদের যেমন অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি মেডিকেল শিক্ষার্থীদেরও পড়াশুনার সমস্যা হচ্ছে আর রোগীরাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া বলেন, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ডাক্তার সেলিম যেভাবে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে সেবা দেন সেভাবে হয়ত অন্য ডাক্তাররা দেন না তা ঠিক। তবে সবাই চেষ্টা করেন রোগী সেবা দেওয়ার। হয়ত বাস্তবতার কারণে রোগীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের কাছ থেকে সেবা পাচ্ছেন না।
রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের গুরুত্বপুর্ণ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের কাছ থেকে আমরা পুরো সাপ্তাহ নয় প্রত্যক ডাক্তারের কাছে একদিনের সেবা প্রত্যাশা করেছিলাম। সেটা হোক গাইনী, হোক মেডিসিন বা অন্যান্য বিভাগের। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনছে না। এ বিষয়টি রাঙামাটি সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীর মাধ্যমে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এখন শুধু স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি লিখার বাকি আছে। এ চিঠি লিখলে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হবে। তাই লিখা হচ্ছে না।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগটি রাঙামাটি জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত বিভাগ। এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা যেন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিতভাবে রোগীদের সেবা দেন এ ব্যাপারে আমি কলেজের অধ্যক্ষকে এর আগেও চিঠি লিখেছিলাম। প্রয়োজনে আরো লিখব।