খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী মানিকছড়ি উপজেলার প্রথম এবং একমাত্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় “রাণী নিহার দেবী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন মংরাজা মংপ্রুসাইন বাহাদুর ভূমিদান করায় প্রতিষ্ঠাণের নামকরণ করা হয় রাজার সহধর্মিণী “রাণী নিহার দেবী”র নামানুসারে।
এলাকার বাহিরে লজিং কিংবা নিকটাত্মীয়ের বাসায় থেকে কলেজ পড়ুয়া কয়েকজন যুবক স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় বাঁশ ও ছনের মিশ্রণে ঘর করে পাঠদান শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে বিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষার্থী প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হওয়ার মধ্য দিয়ে বিদ্যাপীঠটি আলোরমূখ দেখে।
পরবর্তীতে ১৯৮৮সালে ১০টি সৃষ্টপদে শিক্ষক অনুমোদন সাপেক্ষে বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হয়। ঘটনাচক্রে প্রতিষ্ঠাকালীণ সময়ের অনেক শিক্ষক সরকারীকরণ থেকে ছিটকে পড়ে! এতে প্রধান শিক্ষকসহ একাধিক পদ শুণ্য থেকে যায়।
এদিকে ২০০০ সালে কৃষি শিক্ষা বিষয়ে নতুন আরও একটি সৃষ্ট হয় এবং শিক্ষক পদায়ণ করা হয়। এতে করে শিক্ষক পদ সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ আর কর্মচারী ০৩ । কালের আর্বতে চার দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো শিক্ষক-কর্মচারী শুণ্যতা দূর হয়নি। যদিও অবকাঠামোগত ভাবে অনেক এগিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ৬ তলা বিশিষ্ট লিফ্ট সংযুক্ত ভবন, শিক্ষক- ছাত্র হোস্টেল নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে।
বর্তমানে শিক্ষক ৫ ও কর্মচারী ২জন শুণ্য রয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে ৪’শ। শিক্ষক শুণ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও পড়ালেখা মান ধরে রেখে জনপদ আলোকিত করতে জনপ্রতিনিধি ও বিদ্যালয়ের অর্থায়নে যৎসামান্য বেতনে ৪জন সাবেক শিক্ষার্থীকে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আশানুরূপ ফলাফল অর্জন ধরে রাখার চেষ্টা করছেন কর্তৃপক্ষ। গত ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত এসএসসি’র ফলাফল ৯০.৫৭% জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮জন।
গত চার দশকেও শুণ্য পদে শিক্ষক পরিপূর্ণ না হওয়া এবং সময়োপযোগী বিষয়ে পদ সৃষ্টি না করায় অভিভাবক ও সচেতন মহলে হতাশার চিত্র ফোটে উঠে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক (সরকারীকরণে বাদপড়া) ও তিনটহরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা(সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক মো. আতিউল ইসলাম বলেন, উপজেলার সৃষ্টিলগ্নে জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িতে দিতে আমরা কয়েকজন কলেজপড়ুয়া ছাত্র বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় শ্রম ও মেধা দিয়ে বাঁশ ও ছন দিয়ে নিজেরাই স্কুলের ঘর তৈরী করি। পরে দুর্ভাগ্যবশত চাকরি সরকারী না হওয়ায় ১৯৯২ সালে আরেকটি মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করে আজ অবসর জীবনে সময় কাটাচ্ছি। দীর্ঘ ৪ দশকেও উপজেলার একমাত্র ও প্রথম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি আজও প্রধান শিক্ষকসহ ৫ জন শিক্ষক ও ২জন কর্মচারী এখনো শুণ্য। যা অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক।
এদিকে বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাতাকালীন শিক্ষকদের মধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক গত এপ্রিল মাসে অবসরে গেছেন। আগামী ২০২৩ সালে জানুয়ারী-নভেম্বর মাসে আরও ৩জন অবসরে যাবেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার নাথ বলেন, খাগড়াছড়ির প্রবেশদ্বার ও মংসার্কেল অধ্যুষিত এ জনপদে একটি সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দশকের পর দশক শিক্ষক শুণ্য থাকা অকল্পনীয় বিষয়। গত এপ্রিল মাসে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিকবার মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত ও সশরীরে গিয়ে শিক্ষক স্বল্পতার আকুতি জানিয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নতুন নিয়োগে শিক্ষক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পদায়ণের বেলায় সবাই তা ভূলে গেছে। এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষার্থী মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, আশির দশকের পশ্চাৎপদ জনপদে অনেকের ত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি চার দশকেও শিক্ষক শুণ্যতা কাটেনি। আমি নিজে একজন অতিথি শিক্ষকের ব্যয় বহন করছি। শুন্যপদে শিক্ষক পদায়ণ ও নতুন পদ সৃষ্টিতে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।