রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রোমেল চাকমার উপর হামলার ঘটনায় ৭ জনকে আসামি করে রাঙামাটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলী আদালতে ফৌজদারি নালিশ দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে নিজে বাদী হয়ে এ নালিশ দায়ের করেন ডা. রোমেল চাকমা। মামলার ধারা দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৫০৬ (ii) ৩৪ ধারা।
বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো আবু হানিফ নালিশ আবেদনটি আমলে নিয়ে নালিশে থাকা প্রথম তিনজন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও বাকীদের সমন জারি করেন।
যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় তারা হলেন মো. শামীন আলম (৩৫) পিতা অজ্ঞাত, মো. আহাদ (৩২), পিতা অজ্ঞাত এবং আনুশা চৌধুরী (২০) পিতা অনিমেষ চৌধুরী।
এ মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন প্রিসলি চৌধুরী (২৮), শর্মিষ্ঠা রায় (৫৫), পরাগ রায় (চন্দন রায়) (৫৫) এবং তুর্বান রায় (৩০)। রোমেল চাকমার আইনজীবী শিশুমনি চাকমা ও রিমন সরকার এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নালিশ আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১০ টায় ডা. রোমেল চাকমা চেম্বার শেষ করে দৈনন্দিন রুটিন অনুযায়ী শরীর চর্চার জন্য রাঙামাটি শহরের রায় বাহাদুর সড়কে সাইকেল নিয়ে সাইক্লিং করছিলেন। এমন সময় একটি বেপোরেয়া গাড়ি এসে রোমেলের সাইকেলটি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এর প্রতিবাদ করলে আসামিরা ডা. রোমেলকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপরযুপরি আঘাত করে এবং কিল ঘুসি মারে। এদের আঘাতে রোমেলেরে মাথায় থাকায় হেলমেট ভেঙে যায়। এতে ডা. রোমেল কপালে ঠোটে, মুখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
এড. শিশুমনি চাকমা বলেন, আসামিরা একই পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়। শর্মিষ্ঠা রায়, তার দুই মেয়ে আনুশা চৌধুরী ও পিসলি চৌধুরী। গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়া আহাদ পিসলি চৌধুরীর জামাই।
এড. শিশুমনি চাকমা বলেন ১ নং গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়া আসামি শামীন আলম আনুশা চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। চন্দন রায় শর্মিষ্ঠার ভাই, তুর্বান রায় চন্দন রায়ের ছেলে। তারা ঘটনার দিন সংঘবদ্ধভাবে ডাক্তার রোমেলের উপর হামলা করে। আসামি মো শামীন আলম ও মো. আহাদ ছাড়া বাকী আসামিদের ঠিকানা রাঙামাটি শহরের রায় বাহাদুর সড়ক।
এড. রিমন সরকার বলেন, রোমেলের উপর হামলার ঘটনার পর বিষয়টি মীমাংসার জন্য উভয় পক্ষকে নিয়ে গত ১ জানুয়ারী চাকমা সার্কেল চীফ সমঝোতার সালিশ করেন। সেদিন সার্কেল চীফের সিদ্ধান্ত উভয় পক্ষ মানলেও পরে আসামিরা রাজার দেয়া সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করেন। উল্টো ডাক্তার রোমেলকে ভয়ভীতি হুমকি দিচ্ছে। এ ছাড়াও থানায় রোমেলের বিরুদ্ধে করা সাধারণ ডায়েরীটি মামলায় রুপান্তরিত করতে আদালতে জবানবন্ধি দিয়েছিল ৩ নং আসামি আনুশা চৌধুরী। অথচ চাকমা সার্কেল চীফের সিদ্ধান্তে উল্লেখ ছিল আনুশা চৌধুরী এ সাধারণ ডায়েরী প্রত্যাহার করে নিবে। রাজার এ সিদ্ধান্তে আনুশা চৌধুরী ও তার মা শর্মিষ্ঠা চৌধুরী স্বাক্ষরও করেছিল। তা না করে উল্টো ডা. রোমেলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে আসামীরা।
বিষয়টি আমরা বিজ্ঞ আদালতের কাছে উত্থাপন করেছি। বিজ্ঞ আদালত নালিশী আবেদনটি আমলে নিয়ে ৭ আসামির মধ্যে প্রথম ৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং বাকী ৪ জনকে সমন জারির আদেশ দেন।
এদিকে আলোচিত এ ঘটনায় ডাক্তার রোমেলের উপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য বিবৃতি দিয়েছিল বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন রাঙামাটি জেলা শাখা।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঘটনার দিন রাত ১১ টার দিকে ডাক্তার রোমেল মামলার আসামীরা চিকিৎসা নিতে ডাক্তার রোমেলের আগে হাসপাতালে যায়। তাদের বড় কোন ইনজুরি ছিল না। দুই আসামী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যায়। মাথায় ইনজুরি থাকায় ডাক্তার রোমেলকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের সিসি টিভিতে আসামীদের চেহারা দেখা গেছে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র।