জুরাছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নে কুসুমছড়ি গ্রাম। সকাল ৭ টায় বসত ঘরের বান্দায় মাশরুম তুলছে মিকো চাকমা। অনেকেই উঠানে অপেক্ষা করে আছে মাশরুম কেনার জন্য। এ দৃশ্য প্রতিদিনের। উপজেলা সদর থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে মোটরসাইকেল করে মাশরুমের জন্য যান ক্রেতারা। এখন সবাই মাশরুম আপা বলে ডাকে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, জুরাছড়ি ইউনিয়নে কুসুমছড়ি গ্রামে অধিকাংশ জনগোষ্ঠী জুম চাষী । গ্রামের মিকো চাকমা (৩০) একজন । তার স্বামী আপত চাকমা কৃষিক। পরিবারে এক সন্তান ও বৃদ্ধি বাবা-মা মিলে পরিবারে সদস্য পাঁচ জন। মেয়ে প্রথম শ্রেনীতে পড়া লেখা করে। সংসারে নুন আনতে পান্টা পুরায় অবস্থা তাদের। শুধুই মিকো চাকমার নয়, রিপনা চাকমা অবস্থা আরো করুন। এন্টিনার চাকমার অভাবের ধাক্কায় কলেজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে যৌথ ভাবে এ চাষ শুরু করে তারা।
তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা কোন মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ পাইনি। তবে ইউটিউবে দেখে চাষ শিখেছে তারা। প্রথমেই লোকসান গুনতে হয়, তাতে হতাশা না হয়ে হালধরে রাখে। এখন লাভের মূখ দেখছে। এই লাভে মিকো, রিপনা পরিবারে খরচে সহায়তা করছে, করছে ব্যাংকে সঞ্চয়ও। এন্টি কলেজে পড়াশোনা করছে নিবিগ্নে। ইউটিউবের কল্যানে নিজের ও পরিবারের ভাগ্য বদল করেছে। দৈনিক ৩-৪ কেজি মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে মাশরুম । মাশরুমের বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রতিকেজি ৪ শ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। দৈনিক আয়ের ৩০ ভাগ জমা রাখেন বলে জানান তারা।
মিকো, রিপনা ও এন্টি চাকমা বলেন, ইউটিউব থেকে দেখে মাশরুম চাষ শিখেছি। প্রথমে লোকসান হলেও, বর্তমানে লাভের মূখ দেখছি। লভাংশ দিয়েই পরিবারের কিছুটা হলে সহায়তা হচ্ছে।
চাষাবাদের পরিধি বাড়াতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদের সহায়তা কামনা করেন তারা।
তাদের স্বপ্ন এই চাষের পরিধি বাড়ানো। এজন্য প্রয়োজন একটি আলাদা ২-৩ শ ধারণ ক্ষমতার কাচা ঘর, পর্যাপ্ত বীজ। আর্থিক সংকটে তাদের স্বপ্ন ধ্বসে পাড়ার আশংকা তাদের।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মোঃ আবুল খায়ের বলেন মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে। খেতেও সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁতের গঠনে বিশেষ উপযোগী। ফলিক আ্যসিড থাকায় রক্তাল্পতা রোগে উপকারী।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহফুজ আহমেদ সরকার বলেন বাজারে মাশরুমের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। তাই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করা হলে বহু বেকার যুবক-যুবতী আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারবে।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তরুন চাকমা বলেন, নারীদের এমন উদ্যোগ প্রশংসানীয়। তাদের স্বপ্ন চাষাবাদের পরিধি বাড়াতে সকলের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, এমন উদ্যোগীদের সহায়তা প্রদান করা দরকার। আগামী অর্থ বছরে বরাদ্দ পাওয়া গেলে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে।