রাঙামাটির বরকল উপজেলার মেয়াদোত্তীর্ণ ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) অবিলম্বে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন সাবেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রথাগত নেতৃত্ব হেডম্যান, কারবারি ও গণ্যমান্য লোকজন। গত মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বরাবর পাঠানো এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে ভুষণছড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার চাকমা, রঞ্জন্যা চাকমা, ১৫২নং হোরস্থান মৌজার হেডম্যান চন্দ্র শেখর চাকমা, ১৫৮নং মাউদং মৌজার হেডম্যান দীপেন দেওয়ান, ১৪৮নং ভুষণছড়া মৌজার হেডম্যান তাপস দেওয়ান, ১৫৭নং ছোহরিণা মৌজার হেডম্যান জগদীশ চাকমা, চাদারাছড়া পাড়াপ্রধান (কারবারি) মিথিলা রায়সহ ২২ জন সাবেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রথাগত নেতৃত্ব (হেডম্যান ও কারবারি) এবং গণ্যমান্য ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছেন।
এতে বলা হয়, ওই ইউপিতে সবশেষ ২০১৬ সালের ৪ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যার মেয়াদ ২০২১ সালের জুনেই শেষ হয়। কিন্তু বরকল উপজেলার মোট পাঁচটির মধ্যে চারটি ইউপিতে গত বছর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হলেও ভুষনছড়ায় আজ পর্যন্ত নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। ২০১৬ সালের ৪ জুনের নির্বাচনে ইউনিয়নটির ৩নং ওয়ার্ডের ছোটহরিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন মোট ২৭১২ জন।
কিন্তু তাদের মধ্যে বিজিবির ১৮ ব্যাটালিয়নের ৩২৫ জন ভোটার সবশেষ ওই নির্বাচনের আগেই অন্য জেলায় বদলি হয়ে গেছেন। এছাড়া মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১৭ জন। অথচ কেন্দ্রটিতে কাস্টিং ভোটের সংখ্যা দেখানো হয়েছিল ২৫৮১টি, যা প্রকৃত ভোটার সংখ্যার চেয়ে ১৩১টি বেশি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী রীগ প্রার্থী মামুনুর রশিদ ৫০-৬০ জনের ক্যাডারবাহিনী নিয়ে কেন্দ্রটি দখল করে পাহাড়ি ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়ে তিন ঘন্টার বেশি সময় ধরে ইচ্ছামতো জালভোট দেওয়ায় প্রকৃত তালিকার ভোটারের চেয়েও অধিক ভোট কাস্টিং হয়।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার ও বরকল উপজেলার সহকারী রিটানিং অফিসার বরাবর অভিযোগ দেওয়া স্বত্তে¡ও নির্বাচন স্থগিত বা বন্ধ করা হয়নি। পরে কেন্দ্রটিতে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, হাইকোর্টের মামলা চলাকারীন অবস্থায় ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর একতরফাভাবে মামুনুর রশিদকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে গেজেট প্রকাশিত হয় এবং ১২ ডিসেম্বর তিনি শপথ নেন। অন্যদিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের দুই সদস্যসহ মোট ৭ ওয়ার্ড সদস্য শপথ নেননি। এরপরও কেবল ৫ ওয়ার্ড সদস্য নিয়ে ইউপি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন মামুন।
হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে কমিটি করে তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠিত কমিটি তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনে ওই ভোট কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির সত্যতা পাওয়া যায় উল্লেখ করে কেন্দ্রটিতে পুনঃনির্বাচনের সুপারিশ করা হয়। অথচ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার প্রায় দেড় বছর অতিক্রান্ত হলে আজ পর্যন্ত ভুষণছড়া ইউপিতে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা হয়নি।