লংগদুর উপজেলার পাহড়ি এলাকাগুলোর যেদিকে চোখ যায় এখন দেখা মেলে জুম ফসল ও ছোট ছোট মাচাংঘর। মাচাংঘরকে স্থানীয়দের ভাষায় জুমঘর।
এসব মাচাংঘরে থেকেই গত ৫ মাসে পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে জুমের ফসল ফলিয়েছেন স্থানীয় পাহাড়ি জুমিয়া পবিরারের রোকজন। এবার লংগদু উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে উঁচু পাহাড় ও টিলা মিলিয়ে কয়েকশ একর পাহাড়ি জমিতে এবার জুম চাষ হয়েছে।
এবার লংগদু উপজেলায় পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হওয়ায় জুমের ফসল উৎপাদন খুব ভালো হয়েছে বলছেন জুমিয়ারা। ধানের পাশাপাশি এবার জুম ফসল মারফা, শসা, চিনাল, বেগুন, সিমাই আলু, কাঁচা মরিচ, তিল, সিম, আমিলা গোটা, বিভিন্ন জাতের কচু, বিভিন্ন জাতের আলু, সাবারাং-ফুজি (এক প্রকার সুগন্ধি যুক্ত পাতা), আমিলা পাতা (টক পাতা) লাউ, চাল কুমড়া, কলা, আদা, হলুদের ব্যাপক মিশ্র চাষাবাদ হয়েছে।
উপজেলার লংগদু ইউনিয়নের দাদিপাড়ার বাসিন্দা রত্ন মোহন চাকমা (৪০) বলেন, পাহাড়ে এবার জুমের ভালফলন হয়েছে। দাদিপাড়া ছাড়াও আশপাশের প্রায় আট থেকে দশ গ্রামের কথাও তুলে ধরেন তিনি। হাজা ছড়া, শিলাছড়ি, কার্বারি পাড়া, ডানে লংগদু সহ পাহাড়ি বিভিন্ন এলাকায় এবার জুমের ব্যাপক ফলন হয়েছে।
এরইমধ্যে বাজারে জুমের ফসল মারফা, চিনাল, বেগুন, ভুট্টা, আদা, আদা ফুল, হলুদের ফুল, সাবারাং, ফুজি, কচু, বিভিন্ন ধরনের সিম, ঢেরস, বিভিন্ন প্রকারের শাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া বাজারে আসতে শুরু করেছে।
ডানে লংগদু গ্রামের জুম চাষি জয় শংকর চাকমা (৪৫) বলেন, এবার পাহাড়ে জুমচাষ খুব ভালো হয়েছে।
অন্যদিকে আটারকছড়ার ভাঙ্গামুড়া, সুপারি পাতাছড়া, গুলশাখালীর গুরুসতাং, বগাচতরের হেলিপ্যাড, শিবেরেগা, ভাসান্যাদমের খাগড়াছড়ি সহ শিলকাটাছড়া অঞ্চল থেকেও ব্যাপক হারে বাজারে জুমের ফসল আসতে শুরু করেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, নদীতে ভরা যৌবন থাকায় ইঞ্জিন চালিতবোট ও ছোট নৌকায় করে জুমের ফসল খুব সহজেই বাজারজাত করা যাচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে জুমের চাষ হয়েছে। যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩৭৫ মেট্রিকটন। আরও জানা যায়, জুম চাষিদের এবার কৃষি অফিস থেকে ব্রি-৪৮ জাতের ধান বীজ সহ উফশি জাতীয় ফসলের বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জুম চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ সহ সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী বলেন, পাহাড়ে অনেক আগে থেকেই সনাতন পদ্ধতিতে জুমচাষ হয়। তবে এখন অনেক চাষীই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে আধুনিক চাষাবাদ প্রক্রিয়া রপ্ত করেছে। তাই আগের তুলনায় অনেক বেশি ফলন পাচ্ছে।
লংগদু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের আবহাওয়া খুব বৈচিত্র্যময়। সারাদিন রোদ আর রাত হলেই বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি এমনটাই দেখছি। বৈচিত্র্যের কারণেই পাহাড়ের মাটিরও ভিন্ন রূপ। এই মাটিতে যা রোপন করা হোক না কেন খুবই চমৎকার ফলন হয়। এবার লংগদুতে জুমের ভালো ফলন হয়েছে।