গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে গরু-ছাগলকে সরকারি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে সরকারি পশু চিকিৎসক এসেছেন এমন খবর জানতে পেরে গরু-ছাগলকে নিয়ে গিয়ে ভ্যাকসিন দেয় গ্রামবাসী। কিন্তু ভ্যাকসিন দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই মরতে শুরু করে ভ্যাকসিন দেওয়া গরু। ১২ দিনের ব্যবধানে মোট ১৫টি ছাগল ও ৩টি গরুর মৃত্যু অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর পথে আরো অর্ধশতাধিক গরু-ছাগল।
এ ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার ১নং রামগড় ইউনিয়নে লামকুপাড়া গ্রামের খামারি ও বাড়িতে গরু ছাগল লালন-পালনকারীরা। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের দাবীতে আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও গরু ছাগল পালকারীরা রামগড় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গরু ছাগল নিয়ে জড়ো হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের পশু চিকিৎসকের পরামর্শে সরকারি ভ্যাকসিন দেওয়ার পরই এই ঘটনা ঘটেছে। পশু চিকিৎসকের সর্বনাশে ভ্যাকসিন দেয়াতে তাদের সর্বনাশ হয়েছে । গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভ্যাকসিন দেওয়ার একদিন পার হতে না হতেই গরু ও ছাগলের অসুস্থতা দেখা দেয়। আস্তে আস্তে এক এক করে আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত ১৬টি গরু ছাগল মারা গেছে।
গ্রামবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভ্যাটেনারী সার্জন ডা: মো: রুবায়েতুল ইসলাম এর পরামর্শে তার দুই সহকারী জামাল উদ্দিন ও রমজান তাদের পশুগুলোকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন। পশু মালিকদের দাবী এসব ভ্যাকসিন সমস্যা ছিলো অথবা একি সিরিজে সবগুলো পশুকে ভ্যাকসিন দেয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, ভ্যাকসিন দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয় পশুর অতিরিক্ত জ্বর, চামড়ায় গুটি ও ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া । ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতে গরু ছাগল মারা যেতে শুরু করে।
লুৎফর রহমান নামে এক খামারী বলেন, ভ্যাকসিন দেওয়ার দুই দিন পর তার ৩টি ছাগল ও ২টি গরু মারা যায় খামারে আরো অন্তত ১৫টি ছাগলকে ভ্যাকসিন দিয়েছে ধীরে ধীরে সবগুলা অসুস্থ হচ্ছে। গরু ছাগলগুলো হারিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি। আমাদের গ্রামে যারা ভ্যাকসিন দিয়েছে তাদের সবার গরু গুরুতর অসুস্থ। ঋণের টাকায় গরু কিনে লালন-পালন করছিলাম। আগামী কোরবানে বিক্রি করবো এমন আশা থেকে এখন একেবারেই নিঃশ্ব হয়ে গেলাম।
লামকুপাড়া গ্রামের গৃহিনী সায়েরা খাতুন বলেন, আমার দিনমজুর স্বামী বেশিরভাগ অসুস্থ থাকেন গরু ছাগল লালন পালন করে সংসার চালাই ভ্যাকসিন দেয়ার পর আমার ৩ টা ছাগল মারা গেছে বাড়িতে আরো ৩ টা অসুস্থ। তিনি বলেন, এখন হা হুতাশ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ঋণের টাকা কেমন করে পরিশোধ করব জানি না।
একি অভিযোগ লামকুপাড়ার ওবায়দুল হক, আবুল কাশেম সওদাগর, আবদুল করিম, শান্তনু দেবী ও চিকনি ত্রিপুরার। তারা বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের ভ্যাটেনারী সার্জন ডা: মো: রুবায়েতুল ইসলাম বলেন ভিন্ন কথা। তার দাবী সাধারণত পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে সফল ভ্যাকসিনই মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়। মেয়াদ ও গুণগত মান দেখেই সারাদেশে যে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে সেগুলাই এখানে দেয়া হয়েছে। আমি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারপরও এমন খবরে ৩ দিন এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা দিয়েছি। স্থানীয় কোন আক্রান্ত গরু বা ছাগল থেকে সংক্রমিত হয়ে পশুগুলা মারা যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রামগড় থানার উপ-পরিদর্শক নুর উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্থদের আপাদত শান্ত থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদন্ত করে ব্যবস্থার নিবেন।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতা আফরিন বলেন, স্থানীয় সূত্রে গরু ছাগল মারা যাওয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।