রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সারোয়াতলি ইউনিয়নে জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবিত ৩৯১ নম্বর চুরাখালী মৌজা। এর উত্তরে বাঘাইছড়ি উপজেলার সারোয়াতলি মৌজা, দক্ষিণে লংগদু উপজেলার গুলশাখালী মৌজা, পুর্বে বরকল উপজেলার বড় হরিণা ইউনিয়ন, পশ্চিমে বাঘাইছড়ির আমতলী ইউনিয়ন। এর মাঝখানে ১১টি গ্রাম।
এগুলো হল বড় মাল্যা, পিদেগলা ছড়া, ছাগাদিয়ে ছড়া, পাক্কোয়াখালী নুও আদাম, চুরাখালী, নব পেরাছড়া, রাঙাপাহাড়, তালুকদার পাড়া, করল্যাছড়ি, চুরাখালী দজর পাড়া, কুমোর আড়ক ছড়া।
৯২০ পরিবার সংখ্যা প্রায় ২ হাজার একর জুড়ে এলাকায় ৯২১ পরিবারের বসবাস। যাদের জনসংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। কিন্তু এ গ্রামে হয় না কোন সরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ড। ফলে যুগ যুগ ধরে সরকারী সুবিধা থেকে বঞ্চিত এলাকার মানুষ।
সারোয়াতলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভূপতি রঞ্জন চাকমা বলেন, এসব মানুষ আমার এলাকার ভোটার। কিন্তু এসব এলাকার মানুষ যেখানে বসবাস করে সে এলাকাটি আমার ইউনিয়নে অন্তর্ভূক্ত নয়। ইউনিয়নের বরাদ্ধ দেয়া হয় আয়তন অনুসারে।
যেহেতু চুরাখালী মৌজাটি আমার এলাকার মধ্যে নেই ফলে সেখানে উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে পারিনা। ভিজিএফ বা ভিজিডি কোন সুযোগ সুবিধা দিতে পারি না। চলমান প্রধানমন্ত্রীর ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে আমি কাউকে ঘর দিতে পারিনি। ৩৮টি আবেদন পেয়েছি। কিন্তু ভূমির দলিল দেখাতে না পারায় কাউকে ঘর দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ প্রস্তাবিত মৌজাটি ইউনিয়নের আয়তনের সাথে যুক্ত করা হলে উন্নয়ন বরাদ্ধ পাওয়া যাবে। তখন এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ও সারোয়াতলি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রিয় নন্দ চাকমা বলেন, আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে পাহাড়িরা চুড়াখালীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে। এলাকাটি বন বিভাগের অধীন কিন্তু কোন বনই নেই। মৌজা ঘোষণা করে স্থানীয়দের ভূমির বন্দোবস্ত দেওয়া হলে স্থানীয়রা সেচ্ছায় বনায়ন গড়ে তুলবে। তা না হলে এখানে বনায়ন গড়ে উঠবে না।
পুরো মৌজায় নেই কোন কার্পেটিং বা ইটসলিং সড়ক। পুরো মৌজা জুড়ে ৪ টি সরকারি সরকারী ও ৩ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। শিশুদের ঝড়ে পড়া রোধ করতে সম্প্রতি একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করেছেন স্থানীরা। এছাড়াও ১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত ১২ টি পাড়া কেন্দ্র রয়েছে। এলাকা থেকে নেই কোন চাকুরীজীব। বাসিন্দাদের মূল জীবিকার উৎস কৃষি চাষ।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জনগণের কথা বিবেচনা করে চুড়াখালী এলাকাটি ৩৯১ নং নতুন মৌজা করার সুপারিশ করে ২০১৪ সালে ২৭ মে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল একটি চিঠি ভূমি মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠান।
চিঠিতে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, সরেজমিন তদন্ত করে কানুনগোর স্কেচম্যাপ মতে আবাদী ও অনাবাদী জমির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার একর। ৭৬৩ পরিবারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এলাকার ভোটার সংখ্যা ১৫০০ জন। পাড়া কেন্দ্র ৭টি, এনজিও ব্রাক নিয়ন্ত্রিত বিদ্যালয় ৯টি, আনন্দ বিদ্যালয় ৩টি ও বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২টি রয়েছে। জনগণের স্বার্থে সরকারী রাজস্ব আদায় কল্পে ও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে চুড়াখালিটি নতুন মৌজা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। বর্তমানে প্রকল্প না থাকায় এনজিও বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
এ কিন্তু বন বিভাগ ২০২১ সালে ভূমি মন্ত্রনালয়কে একটি আপত্তি পত্র পাঠায় বন বিভাগ। এতে বন বিভাগ দাবী করে চুড়াখালীতে মানুষের বসতি নেই। গভীর বনাঞ্চল বিদ্যমান। বন্যপ্রাণী ও পশুপাখির অবাধ বিচরণ আছে। এছাড়া এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলাভূমি। এটি মৌজা ঘোষণা করা হলে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যর ক্ষতি হবার আশংকা আছে।
এ চিঠিতে মৌজা অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি থমকে যায়।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চুড়াখালী এলাকাটি মৌজা ঘোষণা করা হলে সেখানে জুম চাষ বৃদ্ধি পাবে। অপরিকল্পিত সেগুন বাগান করা হবে। তখন আর এটি বন থাকবে না। এটি মৌজা ঘোষণা করা হলে পরিবেশ বিপর্যয় হবে। কাজেই বন বনের জায়গায় রাখতে হবে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, চুড়াখালী এলাকাকে নতুন মৌজা ঘোষণা করার প্রস্তাবনা ভূমি মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনোও পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।