৫৩ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রাঙামাটির লংগদু ও নানিয়ারচর সংযোগ সড়ক নির্মাণে এসেছে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। তবে, পাহাড়ের একটি সশস্ত্র সংগঠন এর বিরোধিতা করলেও, বাস্তবায়নের দাবিতে এবার মাঠে নামলো ভূক্তভোগী জনসাধারণ। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) লংগদুতে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক বিশাল মানববন্ধন।
স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও রাঙামাটি জেলা সদরের সাথে সড়ক পথে যাতায়তের জন্য সৌভাগ্য হয়নি লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলাবাসীর। দীর্ঘ সংগ্রাম সাধনার পর নানিয়ারচর উপজেলার কিছু অংশে সড়ক উন্নয়ন হলেও লংগদু উপজেলার সাথে সংযোগ সড়কটির উন্নয়ন কাজ বার বার বাঁধার মুখে পড়ে কার্যক্রম থুবড়ে পড়েছে। অথচ নানিয়ারচর সাথে রাস্তাটি নির্মিত হলে খুব সহজে লংগদু হয়ে বাঘাইছড়ি ও সাজেক এর পথ সুগম হবে। কমবে সময় ও বাঁচবে খরচ। রাস্তাটির কাজ অনেকদুর এগিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে রাস্তটির কাজ থমকে যায়। বর্তমানে রাঙামাটির নানিয়ারচরের বড়পোল থেকে লংগদু পর্যন্ত ৩৭.৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২৪ কিলোমিটার এখনো অনুন্নত। এই সড়ক বাস্তবায়িত হলে, শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার নয়, অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ৮ ঘণ্টার যাত্রা কমে দাঁড়াবে মাত্র ৩ ঘণ্টায়। তবে এই উন্নয়ন কর্মসূচির বিরোধিতা করছে পাহাড়ের একটি সশস্ত্র উগ্রবাদী সংগঠন। গত ২৬ মে ‘নানিয়ারচর-লংগদু বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি’ ব্যানারে তারা বিক্ষোভ করে। উদ্দেশ্য ছিল—সড়ক নির্মাণ ঠেকানো।
এই অবস্থায় পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় লংগদু বাঘাইছড়িবাসী তাদের যাতায়াত সহজ করতে সংযোগ সড়কটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে মাত্র ২৪ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করতে আজ ‘লংগদু উপজেলার সর্বস্তরের ভূক্তভোগী জনসাধারণ’ এর ব্যানারে লংগদুতে মানববন্ধনে জড় হয়েছেন হাজারো মানুষ।
মানববন্ধনে লংগদু প্রেস ক্লাবের সভাপতি এ বি এস মামুনের সভাপতিত্বে ও সেলিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, লংগদু উপজেলা পরিষদের (সাবেক) চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা নাছির উদ্দীনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন,স্কুল,কলেজ,
মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অদৃশ্য শক্তি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কিছুদিন আগেও চাঁদার টাকার জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন ছিল। নানিয়ারচর-লংগদু ও বাঘাইছড়ি এই তিন উপজেলার স্বপ্নের সড়ক নানিয়ারচর- লংগদু ২৪ কিলোমিটারের কাজটি থমকে আছে। সড়ক নির্মানের কাজটি দ্রুত এগিয়ে নিতে আমরা কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। সড়ক নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান না হলে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো। প্রয়োজনে দ্রুত সময়ে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে জেলা শহরের সাথে মাত্র ২৪ কিলোমিটার সড়ক তৈরী করে তিন উপজেলাকে উন্নয়নের মহাসড়কে সংযুক্ত করে মানুষের কষ্ট লাগব করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, লংগদু- নানিয়ারচর ২৪ কিলোমিটার সড়কটি ইতোমধ্যে রাঙামাটি জেলা
পরিষদ সদস্য মিনহাজ মুরশীদসহ সেনাবাহিনীর উধ্বর্তন কতৃপক্ষ সরেজমিনে ঘুরে গেছেন। সড়ক নির্মাণের সকল প্রক্রিয়া শেষ। এখন কার্যক্রম চালু করাই সময়ের দাবি। অথচ একটিমহল সড়ক নির্মাণের বিরুদ্ধে গিয়ে নানান ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা করছে। সড়কটি নির্মাণ হলে নানিয়ারচর, লংগদু ও বাঘাইছড়িতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। এছাড়াও অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে এই তিন উপজেলা। তাই এখানকার মানুষ চান দ্রুত ডিপিপি তৈরি করে শুরু হোক কাজের বাস্তব পদক্ষেপ। পাহাড়ের মানুষ চায় উন্নয়ন, চায় শান্তি।