ওমর ফারুক সুমন, বাঘাইছড়ি।
উলুফুল বা ঝাড়ুফুল। ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে যার জুড়ি নেই। প্রতিটি ঘরে অপরিহার্য একটি জিনিস এ ঝাড়ুফুল। এ ফুলের জন্ম পার্বত্য চট্টগ্রাম। এ ফুল অধিকাংশ পাওয়া রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকে। সাজেকে এখন বানিজ্যিক চাষ হচ্ছে ঝাড়ুফুল। বর্তমানে এ ফুল সংগ্রহের ভরা মৌসুম চলছে। স্থানীয় চাহিদা শেষে এ ফুল সারা দেশে যাচ্ছে।
বনবিভাগের তথ্য মতে, চাহিদা থাকায় উপজেলার সাজেক ,মাচালং, বাঘাইহাট , দোসর, সারোয়াতলী এবং সদরে কালামুড়া পাহাড়, চারকিলো, নয়কিলো, রুপকারীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে উল ফুল সংগ্রহ করে পাহাড়ি-বাঙালি নিম্ন আয়ের নারী-পুরুষরা।
পাহাড়ের বন-জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা উল ফুলের আঁটি বানিয়ে ঝাড়ু হিসেবে প্রতিদিন স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে বিক্রি করে শ্রমজীবি মানুষরা। সাপ্তাহিক হাটের দিন উপজেলার চারটি হাটে জীব পিক-আপে করে আনা হয় এসব ঝাড়ু ফুল।
ঝাড়ুফুল ব্যবসায়ী সোলাইমান বলেন, প্রতি হাটে দুই কোটি টাকার ঝাড়ুফুল কেনাবেচা হয়। পাহাড়ি জুমিয়া পরিবারের নারীরাও জুমচাষের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাহাড় থেকে ফুল ঝাড়ু তৈরি করে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করে নিয়মিত। এ সময়কে বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে ঝাড়ুফুলকে বেছে পাহাড়িরা।
চারকিলো পাড়ার বাসিন্দা জীবন চাকমা বলেন, আমরা পাহাড় থেকে উলুফুল কেটে আঁটি তৈরি করে উপজেলা মাঠে পাশ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করি। ফুলের ২০ থেকে ২৫টি শলাকা দিয়ে তৈরি করা হয় একেকটি ঝাড়ুর আঁটি।
প্রতি আঁটি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি ঝাড়ুর আঁটি তৈরি করা সম্ভব হয়। সেগুলো বাজারে বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয় হয়।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালিদের কাছ থেকে পাইকারি দামে উল ফুল কিনে এনে রোদে শুকিয়ে ঝড়ুর আঁটি বানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে সরবরাহ করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। বাজারে প্রতি হাজার ঝাড়ু ফুলের শলাকা সাড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বেচা-কেনা হচ্ছে।
ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ী সোপ্পলাল চাকমা জানান, ৪ বছর ধরে পাহাড়ের নিম্ন আয়ের লোকজনদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ঝাড়ু ফুলের আঁটি কিনে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম-ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। ২০১৮ সালে প্রথম ঝাড়ু ব্যবসা শুরু
আরেক ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ী সাজাহান মুন্সি বলেন ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে একটি কাঁচা ঝাড়ুর আটি ১৫ থেকে ২০ টাকায় কিনে নেই। তারপর রোদে শুকিয়ে শ্রমিক দিয়ে নতুনভাবে ঝাড়ুর মোছা বানিয়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করি।
ঝাড়ু তৈরির শ্রমিক হ্যাপী চাকমা, সালমা খাতুনসহ কয়েকজন বলেন, ‘পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা ঝাড়ু ফুলের আঁটি তৈরির কাজ করেন তারা। প্রতিদিন আঁটি বানিয়ে চারশত থেকে পাঁচশত টাকা পর্যন্ত পান তারা। এই টাকা দিয়ে তাদের সংসার মোটামুটি চলে। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে কাজে লাগে।
উপজেলার কাঠ ব্যাবসায়ী ও জ্যোত মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ গিয়াসউদ্দিন মামুন বলেন পাহাড়ে এখন ঝাড়ু ফুল মৌসুম চলছে পাহাড়িরা সেগুন কাঠ বাগান ছেড়ে ঝাড়ু ফুল বাগানে উৎসাহী হচ্ছে সেগুন বাগানে সময় ও শ্রম দুটোই বেশী লাগে আর ঝাড়ু ফুল উৎপাদন সময় ও খরচ দুটোই কম তবে লাভ বেশী তাই সবাই এখন ঝাড়ু ফুল বাগানে জুকে পড়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র বলেন,
মাটির উর্বরতা কমে গেলে শন ও ঝাড়ুফুল জন্মে। বাঘাইছড়ি সাজেকে বিভিন্ন কারণে যেখানে বন শূণ্য হয়েছে সেখানে ঝাড়ুফুল প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। এখানে আলাদা কোন পরিচর্যা করতে হয় না। শুধুমাত্র ঝাড় পরিষ্কার রাখে ঝাড়ুফুল আপনা আপনি বড় হয়। এখানে কোন সার বা কীটনাশক দিতে হয় না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে যে ঝাড়ুফুলগুলো নেওয়া হয় সেগুলো বন বিভাগগুলোর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে যেতে হয়। অনুমোদন ছাড়া কোন ঝাড়ুফুল বাইরে যেতে পারে না। এখানে বন বিভাগগুলো রাজস্ব পায়।