(রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা যুবলীগের নেতা অসীম তঞ্চঙ্গ্যাকে ‘স্বাস্থ্য সহকারী’ পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।)
রাঙামাটি জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত স্বাস্থ্য বিভাগে এবারের নিয়োগে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের যুব সংগঠন যুবলীগের এক নেতার নাম পাওয়া গেছে। জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা যুবলীগের নেতা অসীম তঞ্চঙ্গ্যাকে ‘স্বাস্থ্য সহকারী’ পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। ২৮ জুন প্রকাশিত ফলাফল বিবরণীতে নির্বাচিত প্রার্থীদের ৩০ জুনের মধ্যে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের দাবি-‘নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে’।
অসীম তঞ্চঙ্গ্যা বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। স্বাস্থ্য সহকারী পদে নির্বাচিত ৩৬ জনের তালিকায় তার রোল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ২৪৪২। তালিকা প্রকাশের পরেই এই যুবলীগ নেতার নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।
রাঙামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ কাজলের স্বাক্ষরিত ১৯ অক্টোবর ২০২৩ সালের অনুমোদিত ৭১ সদস্যের কমিটির ৬৭ নম্বর সদস্য অসীম তঞ্চঙ্গ্যা। তবে তালিকার নাম তার নয় বলে দাবি করেছেন অসীম তঞ্চঙ্গ্যা।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত স্বাস্থ্য বিভাগের ৬ ক্যাটাগরির ৫৮টি শূণ্য পদে কর্মচারী নিয়োগের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব পদের মধ্যে রয়েছে কোল্ড চেইন টেকনিশিয়ান-০১ জন, স্টোর কিপার-০৪, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক-১২, ড্রাইভার -০৩, পরিসংখ্যান বিদ-০২ ও স্বাস্থ্য সহকারী-৩৬ জন। ৫৮ পদের বিপরীতে ৭ হাজার ১৯০টি আবেদন জমা পড়ে। তবে ৪ হাজার ৪২৮ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। উত্তীর্ণ হন ২০২ জন।
নিয়োগের জন্য নির্বাচিতদের পরীক্ষার রোল নম্বর উল্লেখ করে গেল ২৮ জুন ‘চুড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল বিবরণী’ প্রকাশ করে রাঙামাটি জেলা পরিষদ। এতে রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন এবং নিয়োগ ও বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ডা. নূয়েন খীসার স্বাক্ষর রয়েছে। এরআগে এসব পদের বিপরীতে গেল ২০ জুন লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে নিয়োগের বিষয়ে আর্থিক লেনদেন না করা ও ফলাফল প্রকাশে একাধিকবার নোটিশ প্রকাশ করায় স্বচ্ছতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়।
এ নিয়োগ নিয়ে আর্থিক লেনদেন, আত্মীয়করণ ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন মহলে এসব অভিযোগ ওঠে। ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা গেছে, রোল নং-৬৭ অনুপস্থিত থেকেও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যিনি এ পোস্টটি দিয়েছেন, তিনি তার রোল নং-৬৮ বলে উল্লেখ করেছেন।অভিযোগে বলা হয়, পরীক্ষায় অংশ নেয়নি এমন ব্যক্তিও উত্তীর্ণ হয়েছে। পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে, কিন্তু উত্তীর্ণের তালিকায় নেই- এমন অভিযোগও করেন অনেকে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নিয়োগ বাতিলের দাবিও তোলে।
আজ মুঠোফোনে কথা হলে অসীম তঞ্চঙ্গ্যা জানান- রাঙামাটি শহরের শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তার রোল ২৪৪২। চূড়ান্ত তালিকায় তার নাম এসেছে। তবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে অসীম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন-‘আমার কোন ওই ধরণের ইয়ে নাই। আপনি আমার ফারুয়ায় গিয়ে খোঁজ খবর নেন। যুবলীগের অনুমোদিত কমিটিতে ৬৭ নম্বরে নাম থাকার বিষয়টি বললে বলেন-না না, কী জানি। আপনার মনে হয় ভুল হচ্ছে। আমি না ওটা। রাজনীতির সাথে কোন কিছুর সম্পৃক্ততা নাই আমার’।
নিয়োগ নিয়ে সন্দেহ ও অভিযোগ ওঠায় আজ বিকেলে সভায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। এতে ‘নিয়োগ ও বাছাই কমিটির সদস্য সচিব’ সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, ‘নিয়োগটি সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত ও বিতর্কহীনভাবে সম্পন্ন করতে যাতে কেউ তদবির করতে না পারে সেজন্য ফলাফল দেরিতে প্রকাশ করা হয়েছে। ফেসবুকে অনেকে অসত্য ও তথ্য-প্রমাণ ছাড়া নিয়োগের বিরুদ্ধে লিখেছে’।
নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বলেন, ‘জেলা পরিষদের অতীতের দুর্নাম কাটাতে নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। আমি কারও কাছ থেকে এক কাপ চা খাইনি। কেউ আমাকে কোনো টাকা দিয়েছেন বলে প্রমাণ দিতে পারলে আমি পদত্যাগ করব’।
