সবুজ অরণ্য ঘেরা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরপুর পার্বত্য নগরী বান্দরবান।
পাহাড়ের এই সৌন্দর্য্য দেখতে সারা বছর পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে বান্দরবান ।
তাছাড়া বান্দরবানের নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র সৃষ্টি হওয়ায় পর্যটক বাড়ছে আগের তুলনায়। সেই সঙ্গে এখানকার পর্যটন স্পটগুলোতে বাড়তি বেচা কেনা হচ্ছে।
বলা যায়, একমাত্র পর্যটকদের উপর নির্ভর করে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য সচল থাকে।
কিন্তু সম্প্রতি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীদের নির্মূল অভিযান চলমান থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পর্যটকহীন হয়ে পড়েছে পাহাড়ি জেলা বান্দরবান।
এতে এমন পরিস্থিতিতে হতাশ পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সবচেয়ে কষ্টে আছে, এখানকার পর্যটন স্পটের পাশে ঝুপড়িতে বিভিন্ন রকমারি নিয়ে সাজিয়ে বসা ক্ষুদ্র নারী ব্যবসায়ীরা।
কয়েক দফায় দফায় প্রশাসনের পক্ষ থেকেই নিরাপত্তাজনিত কারণে ভ্রমনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পর্যটক শুন্য হয়ে পড়ায় থেমে গেছে তাদের আয়- রোজগার।
বান্দরবান সদর থেকে ৭কিমি দূরত্বের মধ্যে সবচেয়ে কাছের পর্যটন স্পট শৈল প্রপাতের পরসা সাজিয়ে বসা একজন ক্ষুদ্র নারী ব্যবসায়ী মাদ বম-এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলমান অভিযানে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনির্দিষ্টকালে জন্য ভ্রমণ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
এতে দিন দিন পর্যটকদের আনাগোনা একেবারে নেই বললে চলে। একসময় প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার বিক্রি হলে সেখান থেকে আয় হয় হাজার খানিক টাকা। বর্তমানে পর্যটক না থাকায় দিনে ২শ’ত টাকাও পাই না।
আরেক নারী লুপার বম বলেন, করোনার রেশ কাটতে না কাটতে পাহাড়ে সন্ত্রাস নির্মূল অভিযানের কারণে পর্যটন স্পটগুলি বন্ধ হওয়ায় কপালে ছাপ পড়েছে। অভিজ্ঞতা না থাকায় পরের জমিতেও তেমন কাজ পাই না। আজকাল সংসারে হাল ধরতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
তার নিজস্ব বাগান থেকে ফলমূল সংগ্রহ করে বসা আরেক সংগ্রামী নারী সাংপুই বম বলেন, তিন উপজেলা ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এদিকে মুসল্লিদের রোজার মাস। সবকিছু মিলিয়ে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে এই জনপদে। এখন প্রতিদিন গড়ে ২শ’ত টাকা আয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে সন্ধ্যায় গড়িয়ে আসলে বুক ভরা কান্না নিয়ে বাসায় ফেরত যেতে হয়।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাকুম, শীলবান্ধা ঝর্ণা, শিপ্পি পাহাড়, রুমা উপজেলার রহস্যময় বগা লেক, রাইক্ষ্যং পুকুর, ক্যাওক্রাডং, তাজিংডং, জাদীপাই ঝর্ণা, তিনাপ সাইতার, রিজুক ঝর্ণা, থানচি উপজেলার নাফাকুম, আমিয়াকুম, বড়পাথর, রেমাক্রী, বাদুরগুহা, আন্ধারমানিক, বাকলাই ঝর্ণাসহ তিনটি উপজেলার আশপাশের দর্শণীয় স্থানগুলোতে বর্তমানে বদলে গেছে দৃশ্য পথ। এতে করে বিপাকে পড়েছেন পর্যটন খাতে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অলস সময় কাটানোর পাশাপাশি এই খাতে ধ্বসের সংখ্যা তাদের অনেক। তাছাড়া কর্মহীন হয়ে পড়েছে পরিবহন শ্রমিক ট্যুরিস্ট গাইড, হোটেল মোটেল সহ সংশ্লিষ্ট লোকজন।
উল্লেখ্য, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার বিরুদ্ধে অভিযানের কারণে প্রথমে গত বছরে ১৭ অক্টোবর পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন প্রশাসন। পরে জনস্বার্থে নিরাপত্তার জন্য দফায় দফায় বাড়িয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। সর্বশেষ চলতি মাসে ১৬ মার্চ রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি তিন উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন।