নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি।
ব্যালটে অনিয়ম-দুর্নীতি আর অন্যায়-অবিচারের জবাব পেলেন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী রাসেল চৌধুরী। এ ইউপিতে (ইউনিয়ন পরিষদ) ভোট হয় সপ্তম ধাপে ৭ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনে মাত্র ১৮০ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী রাসেল চৌধুরী। নির্বাচনে ছেলেকে হারাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চশমা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন রাসেলের বাবা সুলতান আহমদ মাস্টার। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৭৫। নির্বাচনি বিধি অনুযায়ী প্রাপ্ত ভোট প্রয়োজনীয় সংখ্যার কম হওয়ায় তিনিও জামানত হারিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আমতলী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হন রাসেল চৌধুরী। এরপর থেকে তার সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি আর অন্যায়-অবিচারে অতিষ্ঠ করে তোলে ওই ইউনিয়নবাসীদের। তারা অপেক্ষায় ছিলেন পরবর্তী নির্বাচন। অপেক্ষার পালায় এবার নির্বাচনে ব্যালটে রাসেলের অনিয়ম-দুর্নীতি আর অন্যায়-অবিচারের জবাব দিতে ইউনিয়নবাসীর পক্ষে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) হয়ে আনরস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন মজিবুর রহমান। একই সঙ্গে ছেলেকে হারাতে যোগ দেন রাসেলের বাবা সুলতান আহমদ মাস্টার। প্রতিদ্বন্ধিতা করেন ছেলের প্রতিদ্বন্ধী হয়ে। এর সর্বশেষ ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে ১০৫৩ ভোটে আমতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মজিবুর রহমান। এবার ভোটে রাসেলের হারে উৎফুল্ল ইউনিয়নবাসী। ফলাফলে রাসেল হেরে যাওয়ায় এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
রাসেলের বাবা সুলতান মাস্টার বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্ধিতা করিনি। এর আসল উদ্দেশ্য ছিল আমার ছেলে রাসেলের অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতন থেকে আমতলী জনগণের মুক্তি। গত পাঁচটি বছরে ছেলের নির্যাতন থেকে আমিও রেহাই পাইনি। তাই এবার নির্বাচনে ব্যালটে তার জবাব দিলেন আমতলীর সর্বসাধারণ।
আমতলী ইউনিয়নের অনেকে জানান, তারা রাসেল চেয়ারম্যানের গত ৫ বছরের অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুম, নির্যাতনসহ সব ধরনের জবাব এবার ব্যালটে দিয়েছেন। এতে আমতলীবাসীর জয় হলো। আমরা নৌকাকে ভালবাসি কিন্তু নৌকার মাঝিকে নয়। অথচ রাসেল ছাড়া অন্য যে কাউকে নৌকা প্রার্থী দিলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত থাকত। তাছাড়া এবার আমাদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানও আওয়ামী লীগ পরিবারের।
এদিকে ১০৫৩ ভোট পেয়ে এবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মজিবুর রহমানের নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী হয়েছেন বিএনপির (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মো. আল আমিন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৮২৭। নির্বাচনি বিধি অনুযায়ী মোট প্রদত্ত ভোটের আট শতাংশ পেলেই সেই প্রার্থী জামানত ফেরত পান। তার কম হলে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এবার আমতলী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট পড়েছে ২২৫৬টি। সেই হিসাবে জামানত ফেরত পেতে হলে ২৮২টি ভোট লাগবে। কিন্তু রাসেল আর তার বাবা সুলতান মাস্টার সেই পরিমাণ ভোট পাননি।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার চৈতালি চাকমা জানান, প্রচলিত ইউপি নির্বাচনের আইন অনুসারে প্রার্থীর জামানত ফেরত পেতে মোট প্রদত্ত বা সংগৃহীত ভোটের আট শতাংশ ভোট লাগে। প্রার্থী কেউ এর কম ভোট পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। এদিকে বারবার কল দিয়েও রিসিভ না করায় রাসেল চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।