টানা কয়েকদিনের বর্ষণে খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের আশংকা দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট খাটো পাহাড় ধসের খবরও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি আন্ত:জেলা উপজেলা সংযোগ সড়কগুলোর কোথাও কোথাও পাহাড় ধসে যোগাযোগ কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে।
বিশেষ করে জেলা শহরের শালবন, রসুলপুর, কুমিল্লা টিলা, সবুজবাগসহ যেসব এলাকায় পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে; সেসব এলাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি বেশি। এই বর্ষায় অধিকাংশ পাহাড় ধসের ঘটনাই মূলত: পাহাড় কেটে বসতি নির্মান করার ফলে। সেসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে প্রশাসন এবং পৌরসভার পক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষের জরুরী মাইকিংয়ের পরও বাসিন্দারা ঝুঁকি নিয়ে স্ব স্ব এলাকায় অবস্থান করছেন।
গেলো কয়েকদিনের বৃষ্টিতে শালবনের হরিনাথপাড়া গ্যাফের বাসিন্দা মজিবুর রহমানের অটো রিক্সার গ্যারেজের ওপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছে। তার বাড়িও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কেবল মজিবুর রহমানই নন; আশাপাশে বসতি স্থাপনকারী প্রায় সব বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি পাহাড় ধসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। রসুলপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বহু মানুষ মাটি সরাতে ব্যস্ত। যারাই পাহাড় কেটে বাড়িঘর নির্মান করেছেন, তাদের অধিকাংশই এখন ক্ষতির শিকার।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সংগঠক প্রকৌশলী নির্মল দাশ জানান, মূলত: অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে বসতি নির্মানের কারণে পাহাড় ধসের আশংকা বেড়েছে। তিনি আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে পাহাড় কাটা বন্ধের দাবী জানান।
যদিও ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দারা বলছেন. তারা প্রতি বছর বর্ষা এলে ঝুঁকিতে ও আতংকে বসবাস করেন। প্রশাসন তাদের জন্য স্থায়ী কোন সমাধান করে দেন না। তাই তারা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া জানিয়েছেন, ‘জনগণকে সচেতন করতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। তাদেরকে নিরাপদ স্থানে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে।’
খাগড়াছড়ি পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহ আলম জানান, ‘মেয়রের নির্দেশে সব ধরণের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে ৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে পাহাড় ধসের আশংকায় এখন পর্যন্ত কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেননি।’
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, ঝুঁকির আশংকায় জেলা শহরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কমিউনিটি সেন্টার মিলে ১০টি এবং প্রত্যেক উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবেন তাদের জন্য খাবারের ব্যস্থা করা হয়েছে।
এদিকে টানা বর্ষণের কারণে খাগড়াছড়ির নদ-নদীতেগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার চেঙ্গী ও মাইনি নদীর তীরবর্তী নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে জেলা শহরের মুসলিমপাড়া, গঞ্জপাড়া, খবংপুড়িয়া, বাঙ্গালকাটি, বটতলী, কালাডেবা প্রভৃতি এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছেন। মাইনী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার পানিতে আটকা পড়েছেন।
ইতিমধ্যে খাগড়াছড়ির মুসলিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ২০টির মতো পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া দীঘিনালার ৫টি কেন্দ্রে একশ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহ আলম জানান, পানি বাড়তে থাকায় আরো এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। সেজন্য খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় প্রত্যেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও উপকরণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।