আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি ২৯৯ নং আসনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জেএসএস নেতা ঊষাতন তালুকদার। দুজনই জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে নিজেদের হলফনামা জমা দিয়েছেন।
হলফনামায় দেখা গেছে পেশা পরিবর্তন হয়ে দীপংকরের সম্পদ গত ৫ বছরে বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সাধারণ ঠিকাদার থেকে হয়েছেন প্রথম শ্রেণী কাঠ ব্যবসায়ী। তবে কাঠ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীপংকর কাঠ ব্যবসা করেন তা তারা জানতেন না।
হলফনামায় দীপংকর নিজেকে প্রথম শ্রেণীর কাঠ ব্যবসায়ী উল্লেখ করলেও এ থেকে আয় শূণ্য। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছেন ৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৪ টাকা। যা ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছিল ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৮ টাকা।
এবারের হলফনামায় দীপংকর রাজস্থলী উপজেলার ২১.৩০ একর ও রাঙামাটি শহরের ঝগড়াবিল মৌজার ২.২৩ একর জমির কথা উল্লেখ করলেও মূল্য উল্লেখ করেননি। পার্শবর্তী মৌজার এক হেডম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন এ জমির মূল্য সর্বনিম্ন ৩ কোটি টাকা।
রাঙামাটি উপজাতীয় কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হিরণময় চাকমা (চেঙ্গিস খান) বলেন, আমি ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে কাঠ ব্যবসা করছি দীপংকর কাঠ ব্যবসা করে তা আমার জানা ছিল না। সমিতির আমি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম। আমাদের সংগঠনে তিনি কোন কালে সদস্য ছিলেন না।
রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাওন ফরিদ বলেন, দীপংকর আমাদের সমিতির সদস্য নয়। তিনি এখন কাঠ ব্যবসা করেন কিনা আমার জানা নেই। খোঁজ নিতে হবে।
২০১৮ সালে দীপংকরের হলফনামায় নিজের নামে ২৫ ভরি স্বর্ণের মূল্য আড়াই লাখ টাকার কথা উল্লেখ করলেও স্ত্রীর নামে স্বর্ণ উল্লেখ করেননি। ২০২৩ সালের হলফনামায় নিজের ২৫ ও স্ত্রীর ২৫ ভরি স্বর্ণ দেখিয়েছেন। স্ত্রীর স্বর্ণের মূল্য দেখিয়েছেন ৩ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়োলারী এসোসিয়েশনের রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন কুমার ধর বলেন, দীপংকরের স্ত্রীর স্বর্ণের মূল্যর হিসাব ঠিক নেই। গত ৫ বছরে স্বর্ণের দামের আকাশ পাতাল পরিবর্তন হয়নি।
অঞ্জন কুমার বলেন, বর্তমানে তিন ক্যাটাগরীর সোনার দাম তিন ধরণের। ২২ ক্যারেটের মূল্য ভরি ১ লাখ ৬ হাজার টাকা। ২১ ক্যারেটের মূল্য ভরি ১ লাখ ১ হাজার টাকা এবং ১৮ ক্যারেট (সনাতনী) মূল্য ভরি ৭৩ হাজার টাকা।
দীপংকর তালুকদার তাঁর বছরের আয় দেখিয়েছেন ১৯ লাখ ৩৩ হাজার করেছেন। এ আয়ের মধ্যে বাড়ি ভাড়া ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা, ব্যাংক আমানত ১ লাখ ৯০ হাজার, সংসদ সন্মানী ও ব্যাংক লভ্যাংশের আয় ১২ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ দেখিয়েছেন ১ কোটি ৭৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে শুধুমাত্র ১২ হাজার টাকা এবং নির্ভশীলদের নামে ১০ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
এছাড়া ব্যাংক জমা ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৩০ টাকা, স্ত্রীর নামে ৭৪ লাখ ৪৪হাজার ১৭৬ টাকা এবং নির্ভশীলদের নামে ৪ লাখ ৭৭হাজার ২১৪টাকা।
দীপংকর নিজ নামে এফডিআর দেখিয়েছেন ৫৪ লক্ষ, সঞ্চয়পত্র ১ কোটি টাকা, স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র ৫০ লাখ টাকা, নির্ভশীলারের নামে এফডিআর ২০ লাখ সঞ্চয় পত্রে ৫৫ লক্ষ টাকা। নিজ নামে মোটর গাড়ী ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৮টাকা। ইলেকট্রনিক· সামগ্রির মূল্য ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭শ টাকা। আবসবাপত্রের মূল্য ৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
এছাড়া হলফনামায় অস্ত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। একটি জার্মানীর তৈরী একটি ২২ বোর রাইফেল আরেকটি ইতালির তৈরীর একটি এনবিপি বিজেট বোর পিস্তল। দুটির মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর অন্যনা রেসিডেনসিয়াল এরিয়ায় নিজ নামে ৫ কাঠা যার মূল্য ৩৩ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ছয়টি প্লট ১০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
রাঙামাটি শহরের চম্পক নগরের ৫ তলা দালানের মূল্য ৮৮ লাখ ৩২ হাজার ২৩৩ টাকা ও স্ত্রীর নামে এপার্টমেন্টের মূল্য ৮০ লাখ ১২ হাজার টাকা।
রাঙামাটি শহরের বনরূপাস্থ কল্পতরু হলিডে ইন লিমিটেড প্রকল্পের বিপরীতে অংশীদারী ৫৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৫০টাকা।
২০১৮ সালের হলফনামা তথ্য অনুযায়ী দীপংকর তালুকদারের বাৎসরিক আয় দেখিয়েছিলেন ৯৮ লাখ ১৪ হাজার টাকা। সম্পত্তি ছিল ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৮ টাকা।
অন্যদিকে জনসংহতি সমিতির ঊষাতন তালুকদার তাঁর হলফনামায় দুটি মামলা চলমান আছেন উল্লেখ করেন। হলফনামা মুলে দেখে যায় মামলা দুটিই চেক প্রতারণা ধারা। দুটো মামলা ২০২০ সালের করা মামলা।
ঊষাতন তালুকদার বছরের আয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। এ টাকা তিনি কৃষিখাত থেকে পান ৭ লাখ টাকা ও ব্যবসা থেকে ৫ লাখ টাকা। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৬ হাজার ৩৩০ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কৃষি জমি ১০ একর ( ১ লাখ টাকা), স্ত্রীর নামে ৯ একর (৩ লাখ টাকা) ও যৌথ মালিকানাধীন ১২ একর (১২ লাখ টাকা) ও যৌথ মালিকানাধীন ক্ষেত্রে প্রাপ্তির অংশ ৪ একর( ৫লাখ টাকা)। রাঙ্গাপানি মোটর এন্ড সার্ভিসিং সেন্টারে নিজ নামে ৮ লাখ টাকা রয়েছে।
অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ টাকা ৫লক্ষ টাকা, স্ত্রীর নামে এক লক্ষ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে স্বর্ণ রয়েছে ৮ভরি (লাখ ২০ হাজার টাকা)। ইলেকট্রনিক সামগ্রির মূল্য ৩ লাখ টাকা ও আসবাবপত্রের মূল্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।