আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি ২৯৯ সংসদীয় আসনে অপর দুই প্রার্থী সাংস্কৃতিক জোটের অমর কুমার দে ও তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমানকে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্ধী বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদার। বলেন, দুজনই স্ব স্ব অবস্থানে জনপ্রিয় ব্যাক্তি। তাদের যথেষ্ট ভোট আছে।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে রাঙামাটি আসনে নিজস্ব নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে এ কথা বলেন দীপংকর তালুকদার।
সংবাদ সম্মেলনে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অংসুই প্রু চৌধুরী, সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর, জাতীয় পরিষদের সদস্য অভয় প্রকাশ চাকমাসহ দলটির জেলা শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বলেন এ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোন চ্যালেঞ্জ দেখছি না। মানুষের মাঝে স্বতস্ফুর্ততা দেখতে পাচ্ছি। ভোটার উপস্থিতি থাকবে না তা ঠিক নয়। ভোটারদের সাড়া পাচ্ছি। ২০০১ সালে রাঙামাটি আসনে ৪০টি কেন্দ্রে কোন ভোট পড়েনি। তখন তো সাংবাদিকরা কিছুই লিখেনি। কিন্তু এখন লেখা লেখি করছে।
২১ দফা সম্বলিত তার নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যে ছিল পার্বত্য চুক্তির অবাস্তবায়িত মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, রাঙামাটিতে রেলপথ ও বিমান বন্দর নির্মাণ, রাউজান থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত চার লেন রাস্তা নির্মাণ, পরিবেশ বান্ধব ইকো টরিজম গঠন, সাম্প্রদাায়িক সম্প্রীতি উন্নয়ন, রাঙামাটিতে একটি কারিগরী শিক্সা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, ঠেগামুখ স্থল বন্দর চালু, অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা, জেলা কারাগার ও খাদ্য গুদাম স্থানান্তর, আন্ত উপজেলা সড়ক উন্নয়ন, কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা বানানো, মাছ চাষ বৃদ্ধি, হিমাগার স্থাপন, এমপিওভুক্ত না হওয়া ও জাতীয়করণ না হওয়া বিদ্যালয়গুলো এমপিওভূক্তি ও জাতীয়করণ করা, সম্ভাব্য সব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন সম্ভব নয় এমন এলাকায়ি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করা, সব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা, ফলজব বনজ বাগান সৃষ্টির উদ্যোগ, সব উপজেলায় স্টেডিয়াম ও গলফ মাঠ স্থাপন করা, স্বাস্থ্য সেবা বঞ্চিত এলাকয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা এবং রাঙামাটি শহরে জনবহুল এলাকাগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা।
সংবাদ সম্মেলনে দীপংকর তালুকদার বলেন, এ পর্যন্ত আমি চারবার নির্বাচিত হয়েছি। এজন্য সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আজ পর্যন্ত আমি এ জেলার জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।
গত পনের বছরে রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগসহ নানাখাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে এবং সব সম্প্রদায়েরর মধ্যে সম্প্রীতি অটুট আছে।
আবার নির্বাচিত হলে আমার অভীষ্ট লক্ষ্য রেখে এ জেলাকে একটি সন্ত্রাসমুক্ত, শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নত সমৃদ্ধ এবং স্মার্ট রাঙামাটি বিনির্মাণে আমার চলমান আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমার এসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে প্রকাশিত নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিশ্রুতির বিস্তারিত তুলে ধরেছি। এদিকে প্রচারণায় মাঠে ব্যস্ত সরকার দলীয় প্রার্থী দীপংকর তালুকদার।
নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ছুটছেন শহর থেকে শুরু করে প্রতিটি উপজেলা, বিভিন্ন ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়া, মহল্লায়। শীত উপেক্ষা করে সার্বক্ষণিক রয়েছেন ঘামঝরা দৌঁড়াদৌঁড়িতে।
দীপংকর তালুকদার ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আসনটিতে বিজয়ী হন। হেরেছিলেন ২০০১ সালে বিএনপির মণিস্বপন দেওয়ান এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে জনসংহতি সমিতির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারের কাছে।
আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে অপর দুই প্রতিদ্বন্ধী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের অমর কুমার দে এবং তৃণমূল বিএনপির মো. মিজানুর রহমানও প্রাচারণায় রয়েছেন।
অমর কুমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে রাঙামাটি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সবশেষ গত কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
কিন্তু ২০২২ সালের ২৪ মে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের পর জেলা আওয়ামী লীগের যে ১৯ ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে দল বাদ দেওয়া হয় তাদের মধ্যে অমরও একজন অন্যতম।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অমর কুমার। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী না হয়ে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মনোনয়নে ‘ছড়ি (লাঠি)’ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকের দীপংকর তালুকদারের (বর্তমান এমপি) সঙ্গে নির্বাচনে লড়ছেন তিনি।
অমর কুমার বলেন, আমি নির্বাচিত হলে রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিমান বন্দর ও রেল লাইন স্থাপন, সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, রাঙামাটিতে গ্যাস লাইন সরবরাহ, পর্যটনের বিকাশ ও উন্নয়ন এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নসহ পাহাড়ে ভূমিবিরোধ নিস্পত্তির লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। আমার দাবি ভোট যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। যাতে আমাকে দেশ ছাড়ার হুমকি দেওয়া না হয়।
অন্যদিকে দলীয় প্রতীক ‘সোনালী আঁশ’ নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান। যাচ্ছেন সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন, পাড়া-মহল্লায়।
মিজানুর রহমান বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাসে নির্বাচন করছেন তিনি। রাঙামাটিতে তৃণমূল বিএনপির জেলা কমিটি না থাকলেও জেলার প্রতিটি উপজেলায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে তার পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে জানান মিজানুর রহমান।