বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম তংমব্রু সীমান্তে মায়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের এপারে জলপাইতলী, বাজার পাড়ার এলাকার মানুষ আতঙ্কে প্রাণ রক্ষার্থে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। থেমে থেমে বিকট গুলি ও বোমার শব্দে ঘুমধুম তংমব্রু সীমান্তে ওপারে উত্তেজনা রেশ পড়েছে এপারে। সীমান্তে বসবাসরত এলাকাবাসীদের মাঝে মুহূর্তে মুহূর্তে আতঙ্কের বিরাজ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ফাঁকা পড়ে আছে তুমব্রু বাজার, বেতবুনিয়া বাজার স্কুল ও মাদ্রাসা।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, গতকাল সোমবার রাত ৯টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অনবরত গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কে ভয়ের মধ্যে রাত কাটিয়েছে এপারের বাসিন্দারা। এই রির্পোট খেলা পর্যন্ত ওপারে থেমে থেমে গুলি শব্দের কেঁপে উঠে বাংলাদেশ সীসান্তে বাসিন্দারা। ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকুবুনিয়া সীমান্ত চৌকি ঘিরে রাতভর গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে কেঁপে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার অন্তত ৮ টি গ্রাম।
এদিকে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারী) সকালে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল এসে পড়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের মধ্যমপাড়া মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম এর বাড়ির পাশে। সেখানে ছৈয়দ নুর সিকদারের বাড়ির জানালার কিছু অংশ ফেটে গেছে। এতে কোন হতাহতের ঘটনা হয়নি বলে জানালেন ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো।
তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো আজও সীমান্তে ঘেঁষা মানুষজন ভয়ে কাজকর্মে বের হয়নি। দোকানপাট বন্ধ থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ও নিতে পারছে না স্থানীয় সীমান্ত লাগুয়া গ্রামের জনসাধারণ। গ্রামে কয়েকজন পুরুষ ছাড়া কেউ নেই। নারী-শিশুরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছে, সবার মধ্যে গোলাগুলির ভয়ে মধ্য দিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এক একদিন এভাবে যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকুবুনিয়া সীমান্ত চৌকি দখলকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে যার ফলে আতঙ্ক বেড়ে যায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে।
বেতবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, এখন যতটুকু ভয় পাচ্ছে মানুষ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও এত ভয় পাই নি। এভাবে আর কতদিন যাবে কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।
এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির থেকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পর্যন্ত সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১১৪ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নতুন করে যারা প্রবেশ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া বিজিপির সদস্য সংখ্যায় ছিল ১১৩। পরে আরও দু’জনকে রিসিভ করলে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫। এই রির্পোট লেখা পর্যন্ত ২২৮ জন মায়ানমার জান্তা বাহিনী প্রাণ রক্ষার্থে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে পালিয়ে এসেছে।