দেশে বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে নারীদের কর্মদক্ষতা ও প্রযুক্তিজ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষেত্রে তাঁদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নও সম্ভব হবে।
খাগড়াছড়িতে খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতি কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে এসব মন্তব্য করেছেন আলোচকেরা। গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সোমবার (১১ই মার্চ) ‘ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নারী ও কিশোরীদের অন্তর্ভূক্তির প্রচার বিষয়ক’শেয়ারিং এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সহিদুজ্জামান। সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষায় রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক এবং জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন কেএমকেএসের REWG প্রকল্পের সমন্বয়কারী গীতিকা ত্রিপুরা । স্বাগত বক্তব্য দেন খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী ও নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা।
সমতলের থেকে পাহাড়ের নারীরা কর্মঠ ও পরিশ্রমী বলে জানান খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, নারীদের ক্ষমতায়নে সকলে মিলে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকার নারীদের উন্নয়নে কাজ করছে। আমি দেখেছি, সমতলের চাইতে এখানার নারীরা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে। আগের তুলনায় নারীরা এগিয়ে গেছে, আরো এগিয়ে যাবে। নিজের যোগ্যতায় তারা আগামীতে তার দেশের কল্যাণ কাজ করবে। সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত উদ্যোগে নারীদের ক্ষমতায়ন ও কল্যাণে কাজ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এক সাথে কাজ করলে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে পারবো।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শানে আলম বলেন, নারীরা তাদের যোগ্যতায় এগিয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যদেরও মন্ত্রিপরিষদের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব দিয়েছে। সরকার ইতিমধ্যে নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সুযোগ দিচ্ছে। যোগ্যতা থাকলে সকল ক্ষেত্রে জায়গা দখল করতে পারবে, এতে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের অধিকার নিজেরাই নিতে হবে।
জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত এসডিজি-৫ এর লক্ষ্যমাত্রাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন লেখক ও গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। তিনি বলেন, সরকারের অঙ্গীকারকে বাস্তবায়নে সকল নাগরিকদের সহযোগিতা দিয়ে কাজ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের সমঅধিকার ও সমসুযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে । বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী শেফালিকা ত্রিপুরা বলেন, বর্তমানে দেশের সকল ক্ষেত্রে নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ খাতেও নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে, তবে যথেষ্ট নয়। তবে স্বীকৃত এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও করোনা মহামারি, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ, মূল্যস্ফীতি ও আরও কিছু বৈশ্বিক সমস্যা নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতায় বাধা সৃষ্টি করছে।
নারীরা প্রথমে নারীদের প্রতি সহনশীল মনোভাব থাকার কথা বলেছেন উপজেলা তথ্য আপা প্রকল্পের তথ্য অফিসার তুষিকা ত্রিপুরা। তিনি বলেন, অনেক পরিবারে শ্বাশুড়ির দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন। আবার অনেকে নারীদের বদনাম নারীরা করে থাকে। এর কারণে আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে।
গুইমারা উপজেলার মিলিচিং মারমা নামে এক ইউপির সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে সেটা ঠিক, কিন্তু আমরা ইউনিয়ন পরিষদেও বৈষ্যমের শিকার হয়। অনেক সময় বাজেটের সময় একটা ওয়ার্ডের মেম্বার যে বরাদ্দ পায়, সেটা আমরা একটা ইউনিয়নের তিনজন মহিলা মিলে সেই বাজেট পায় না।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জোনায়েদ কবীর সোহাগের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার ইউএনও নাঈমা ইসলাম, গুইমারা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাসিনা আকতার, পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা, গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হরিপদ্ম ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক ও সাংবাদিক চিংমেপ্রু মারমা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক কাজল বরণ ত্রিপুরা, নারী কার্বারী অঞ্জলি ত্রিপুরা, কার্বারী ও ইউপি সদস্য গৌরি মালা ত্রিপুরা, এনজিও কর্মী স্বপ্না চাকমা, সমাজসেবক জয় প্রকাশ ত্রিপুরাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।