রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় ৮ জন নিহত ও ৩৩ জন আহতের ঘটনার দীর্ঘ ছয় বছর পার হলেও ধরা পড়েনি ঘটনার মুলহোতাদের কেউ। তাই হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি এবং আহত- নিহত পরিবারের সদস্যদের পূনর্বাসের দাবীতে মানববন্ধন ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারক লিপি দিয়েছে নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকাল ১০টায় পূর্ণবাসন কমিটি’র সভাপতি আবু তাহের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে নিহত ও আহতদের পরিবারসহ স্থানীয় জনগন। এসময় আহতদের পুনরায় উন্নত চিকিৎসা ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান এবং পূনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানান। এছাড়াও বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্বারক লিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৯ সালের ১৮ই মার্চ ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৮ জন নিহত ও ৩৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন। বর্তমানে আহতদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘটনার পর সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারের সদস্যদের পুর্নবাসন ও দোষিদের গ্রেপ্তার করার কথা বললেও দীর্ঘ ৬ বছরে তা অধরাই রয়ে গেছে। প্রতিশ্রুতির কোন কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি এখনো পর্যন্ত। তাই আমরা আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও যোগ্যতা অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের চাকুরি ব্যবস্থার পাশাপাশি পাহাড়ে প্রত্যাহার করা সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপনের দাবি জানাই।
তারা আরো বলেন নির্বাচনের সংহিসতার দীর্ঘ ৬বছর পেরিয়ে গেলেও কোন সন্ত্রাসীকে এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত বিচার না হওয়ার কারণে বাঘাইছড়ি উপজেলায় এমন ঘটনা প্রায় প্রতিদিন ঘটছে। এদের প্রতিহত করতে প্রশাসনকে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। এসময় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম, কেন্ত্রীয় পার্বত্য নাগরিক পরিষদদের সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, গুলিবৃদ্ধ মাহাবুল আলমসহ নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ই মার্চ ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাজেকের তিনটি ভোট কেন্দ্র থেকে মালামাল নিয়ে উপজেলা সদরে ফেরার পথে ৯ কিলো নামক এলাকায় সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নির্বাচনী দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ৭ জন নিহত ও ৩৩ জন গুলিবৃদ্ধ হয়ে মারাত্মক ভাবে আহত হয়। পরে গুলিবিদ্ধদের সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। এ ঘটনায় সর্বমোট আটজন নিহত হয়েছিলো।
তারা হলেন- প্রিজাইডিং অফিসার মো. আব্দুল হান্নান আরব, বাঘাইছড়ি কিশালয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মো. আমির হোসেন (৪০), ভিডিপি সদস্য মো. আল আমিন (১৭), বিলকিস আক্তার (৩০), মিহির কান্তি দত্ত (৩৫), জাহানারা বেগম (৩৭) ও মন্টু চাকমা (৩৫)। আহত হয় ৩৩জন। ঘটনার পর পুলিশ বাদি হয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ্য করে মামলা করলেও গ্রেপ্তার হয়নি মূল হত্যাকারীরা।