রবিবার , ৫ অক্টোবর ২০২৫ | ২১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. জাতীয়
  2. রাঙামাটি
  3. খাগড়াছড়ি
  4. বান্দরবান
  5. পর্যটন
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. রাজনীতি
  8. অর্থনীতি
  9. এনজিও
  10. উন্নয়ন খবর
  11. আইন ও অপরাধ
  12. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
  13. চাকরির খবর-দরপত্র বিজ্ঞপ্তি
  14. অন্যান্য
  15. কৃষি ও প্রকৃতি
  16. প্রযুক্তি বিশ্ব
  17. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
  18. শিক্ষাঙ্গন
  19. লাইফ স্টাইল
  20. সাহিত্য
  21. খোলা জানালা

পাহাড় জুড়ে আলোর উৎসব: প্রবারণা পূর্ণিমায় রঙিন ফানুসে মুখরিত হবে আকাশ

প্রতিবেদক
উচ্চপ্রু মারমা, রাজস্থলী, রাঙামাটি
অক্টোবর ৫, ২০২৫ ৭:৫৭ অপরাহ্ণ

আর মাত্র একদিন পরই পাহাড়ের জনপদ মুখরিত হবে আনন্দ-উল্লাসে। আকাশ ভরে উঠবে রঙ-বেরঙের ফানুসে, জ্বলজ্বলে আলোর ঝলকানিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে পাহাড়ের প্রতিটি আঙিনা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা আগামী ৬ অক্টোবর উদযাপিত হতে যাচ্ছে। প্রতি বছরই ভক্তি, শ্রদ্ধা আর ধর্মীয় আবেগকে ধারণ করে এ উৎসব পালিত হয় পাহাড়ে।

প্রবারণা পূর্ণিমা মূলত ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ভিক্ষুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, পূজা-অর্চনায় অংশ নেন এবং জীবজন্তুর কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা করেন। অশুভ বিদায় ও মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে মানুষ এই উৎসবে মেতে ওঠে।

এ উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো আকাশ ভরানো রঙিন ফানুস। সন্ধ্যা নামলেই গ্রাম থেকে শহর, পাহাড় থেকে পাড়া—সবখানে প্রতিযোগিতা শুরু হয় ফানুস উড়ানোর। কেউ বানায় ছোট, কেউ বানায় বিশাল আকৃতির ফানুস। পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন সবাই একত্র হয়ে আকাশে ছাড়ে আলোকিত ফানুস। এতে শুধু আকাশ নয়, মানুষের মনও ভরে ওঠে আলোর আনন্দে।

পাহাড়ি জনপদের প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে থাকবে উৎসবের আমেজ। ভোর থেকে ভক্তদের আনাগোনায় মুখরিত থাকবে বিহার চত্বর। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি থাকবে দান-ধ্যান ও বিশেষ প্রার্থনা। শিশু-কিশোরদের জন্য এই দিন বাড়তি আনন্দের, আর বড়দের জন্য দিনটি হয়ে ওঠে ভক্তি ও প্রার্থনায় মগ্ন হওয়ার সময়।

প্রবারণা পূর্ণিমা শুধু ধর্মীয় আচার নয়; এটি পাহাড়ের মানুষের মিলনমেলা ও সংস্কৃতির অনন্য রূপ। পাহাড়ের রাত যখন ফানুসে ভরে যায়, তখন মনে হয় পুরো জনপদ যেন এক উৎসবের আলোয় স্নাত। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে প্রবারণা পূর্ণিমা পাহাড়ি জনপদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আনন্দ-আলোকের প্রতীক হয়ে রয়েছে।

এ উপলক্ষে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলছে প্রস্তুতি। প্রতিটি বিহারে সাজানো হচ্ছে রঙিন আলোকসজ্জা, প্রস্তুত করা হচ্ছে বিশেষ প্রার্থনা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন। স্থানীয় যুব সমাজ, নারী ও শিশুরাও সমানভাবে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন উৎসবকে আনন্দমুখর করে তুলতে।

একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু জানান, “প্রবারণা পূর্ণিমা আত্মশুদ্ধি ও মঙ্গল কামনার উৎসব। এদিন আমরা সমাজের কল্যাণ, দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি এবং মানবজাতির শান্তি কামনায় নিয়ে প্রার্থনা করি।” জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তি হোক।

রাজস্থলীর মংপ্রু মারমা বলেন,,“প্রবারণা পূর্ণিমা আমাদের সবচেয়ে আনন্দের দিন। এদিন আমরা পরিবার-পরিজন সবাই মিলে পূজা করি, ভিক্ষুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং রাতে ফানুস উড়িয়ে আকাশ আলোকিত করি। এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও প্রতীক।”

অংনুচিং মারমা বলেন,,“শিশুরা ফানুস উড়ানোর অপেক্ষায় থাকে। পুরো আকাশ যখন আলোর ঝলকে ভরে যায়, তখন মনে হয় যেন অশুভ বিদায় নিয়ে মঙ্গল ফিরে আসছে। এই উৎসব আমাদের সবাইকে মিলেমিশে আনন্দ করার সুযোগ করে দেয়।”

বিক্রেতা ও ক্রেতারা জানিয়েছেন, এ বছর বাজারে ব্যাপক বেচাকেনা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রবারণার দিন বিহারে আহারের জন্য থামি কেনা হচ্ছে বেশি।

প্রবারণা পূর্ণিমা শুধু ধর্মীয় নয়; এটি পাহাড়ি জনপদের একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এই দিনে বিভিন্ন গ্রামে মেলা বসে, আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় মানুষদের বিশ্বাস—ফানুস আকাশে উড়িয়ে তারা অশুভ শক্তিকে বিদায় জানায় এবং আগামীর জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে।

প্রতি বছর এ উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ে সৃষ্টি হয় এক অনন্য মিলনমেলা। পাহাড়ি জনপদ জুড়ে যে আলোর উৎসব দেখা যায়, তা শুধুই আনন্দের নয়, বরং ভ্রাতৃত্ব ও মিলনের এক উজ্জ্বল বার্তাও ছড়িয়ে দেয়।

সর্বশেষ - আইন ও অপরাধ

আপনার জন্য নির্বাচিত
error: Content is protected !!
%d bloggers like this: