চাকরির প্রলোভন দেওয়াসহ অন্যান্য ঘটনায় প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন অভিযুক্ত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সাথোয়াই প্রু চৌধুরী। এ ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় সাংবাদিকমহলসহ ভুক্তভোগীরা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় তারা কঠোর কর্মসূচী পালন করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ (খাপাজেপ) সদস্য সাথোয়াই প্রু চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ’ শিরোনামে ১৭ নভেম্বর জাতীয় দৈনিক সবুজ বাংলা পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ওই সংবাদ প্রকাশের জেরে গত ২৯ নভেম্বর-২০২৫, সি.আর-৫০০/৫০৬ ধারা ৩৪ দ: বি: অনুযায়ী একটি মামলা দায়ের করে খাপাজেপ সদস্য সাথোয়াই প্রু চৌধুরী। সে মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধিসহ অন্য আরেক সাংবাদিক ক্যহ্লা মারমা এবং বাংলাদেশ মারমা ছাত্র ঐক্য পরিষদের সদর উপজেলা শাখা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সাবেক) মংউচিং মারমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলা দায়ের করা হয় জেলার মানিকছড়ি থানায়।
ওই সংবাদের ভুক্তভোগী প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধি বলেন, শুরু থেকেই প্রতারণা সংক্রান্ত ওই সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য প্রতারক খাপাজেপ সদস্য সাথোয়াই প্রু চৌধুরী আমাকে ১৫ টন খাদ্য শস্য দেয়ার প্রস্তাব দেয়। তাঁর এমন অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে হুমকি দেয়া হয়েছিল। তখন মামলার ভয় দেখিয়ে আমার সাংবাদিকতা থামাতে পারবেন না বলে জবাব দিয়েছি। তার অপকর্মের সে ডকুমেন্টসগুলো এখনও আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। শেষ পর্যন্ত প্রতারণা ও দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খাপাজেপ সদস্য সাথোয়াই প্রু চৌধুরী দুর্নীতির সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে জেলার সদর ও মানিকছড়ি থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেন প্রতারক সাথোয়াই প্রু চৌধুরী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিজের দোষ লুকানো এবং ওই সাংবাদিককে ভয় দেখানোর জন্য গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে খাগড়াছড়ি সদর থানায় তিন জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে, দুর্নীতি-প্রতারণার সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করায় স্থানীয় সাংবাদিক মহল ও ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের আনীত অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে সাথোয়াই প্রু চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। অন্যথায় তারা কঠোর কর্মসূচী পালন করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা জানান, সাধারণ মানুষ কিংবা ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে গঠিত জেলা পরিষদ এর পক্ষ থেকে দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ একটি পরিষদ প্রত্যাশা করেছি, কিন্তু একজন সদস্য এভাবে প্রতারণা ও দুর্নীতি করে যাবে, তাঁর লাগাম টেনে ধরার কেউ কি নেই? দুর্নীতি নিয়ে যে সাংবাদিকরা লিখে, উল্টো সেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, এ কেমন কথা? অবিলম্বে এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচী পালন করা হবে।
মামলার এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) বাতেন মৃধা এ সংক্রান্তে বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি। এ প্রসঙ্গে জানতে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মির্জা সায়েম মাহমুদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে খাপাজেপ’র সদস্য সাথোয়াই প্রু চৌধুরীর প্রতারণার অভিযোগ ও সাংবাদিদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, আমি গত ১৮ নভেম্বর নতুন এ কর্মস্থলে যোগদান করেছি। এ বিষয়টি আমার জানা নেই এবং কেউই আমাকে অবগত করেননি। তবে অভিযোগ পেলে কোথাও অনিয়ম-ব্যত্যয় ঘটলে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।


















