প্রাণঘাতী মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দুই বছর পর আবার নতুন করে বৈসাবি উৎসবের রং লেগেছে পাহাড়ে। আবার স্বাভাবিক পরিবেশে প্রাণ ফিরে পেল পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী এই প্রধান সামাজিক উৎসবটি।
এতে আনন্দ উচ্ছ্বাসে পাহাড়ি লোকজন। করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে পরপর দুই বছর কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দুটি উৎসব পালিত হয়েছে কেবল ঐতিহ্যবাহী রীতি-প্রথার স্মরণে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এ বছর রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক আয়োজন চলছে উৎসবটির। রাঙামাটিতে আয়োজিত গত ৫ এপ্রিল শুরু পাঁচ দিনব্যাপী বিজু সাংগ্রাই বৈসুক বিষু মেলা-২০২২ শেষ হয়েছে ৮ এপ্রিল।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় এ মেলার আয়োজন করে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইনস্টিটিউট।
১২ এপ্রিল থেকে পাহাড়িদের ঘরে ঘরে শুরু হচ্ছে তিন দিনের মুল উৎসব।
শুক্রবার শেষ দিন বিকালে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা, মুখরোচক মিশ্র সবজি রান্নার প্রতিযোগিতা এবং সন্ধ্যায় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে আয়োজিত বিজু মেলা।
মেলায় এছাড়াও প্রতিদিন পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী নাচগান, সাংস্কৃতিক উৎসব, খেলাধুলা, পণ্য প্রদর্শনী, নাটক মঞ্চায়নসহ নানা বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন ছিল।
পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসবটিকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলা জুড়ে এখন উৎসব আনন্দের সাজ সাজ রব। লেগেছে উৎসবের রং। উৎসবমুখর হয়ে উঠছে গোটা পাহাড়ি জনপদ। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসবের আয়োজন করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকজন। উৎসবটিকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসুক ও তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু নামে পালন করে। ১২ থেকে ১৪ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী মুল উৎসব পালন করা হয় পাহাড়িদের ঘরে ঘরে। এবারও ১২ এপ্রিল ভোরে পাহাড়ি ছড়া, ঝরনা, হ্রদ বা নদীর ঘাটে পানিতে ফুল ভাসিয়ে শুরু হবে পাহাড়িদের তিন দিনের ঐতিহ্যবাহী প্রাণের উৎসবটির।
যুগ যুগ ধরে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের বন্যায় তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান এ সামাজিক উৎসবটি পালন করে আসছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলো। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে পরপর গত দুটি উৎসবের কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। উৎসবটিকে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ‘বৈসুক’, মারমা সম্প্রদায়ের ‘সাংগ্রাই’ এবং চাকমাদের ‘বিজু’ আদ্যাক্ষর মিলিয়ে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ও বলা হয়।
বাংলাবর্ষের ২৯ চৈত্র (১২ এপ্রিল) শুরু হয়ে নববর্ষের পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত পাহাড়িদের ঘরে ঘরে পালিত হবে বৈসাবি উৎসবটি। চাকমাদের সামাজিক রীতি অনুযায়ী ২৯ চৈত্র (১২ এপ্রিল) পালিত হবে ফুলবিজু। এদিন পুরনো বছরের যত দুঃখ-গ্লানি, ভয়, অন্তরায়, বাধা-বিপত্তি দূর করে নতুন বছরে সুখ-শান্তি ও সফলতার প্রার্থনা জানিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার স্মরণে পুস্পাঞ্জলি নিবেদন করে পানিতে ফুল ভাসানো হবে। এরপর দ্বিতীয় দিন ৩০ চৈত্র (১৩ এপ্রিল) পালিত হবে ‘মূলবিজু’। এদিন ঘরে ঘরে আয়োজন করা হবে আনন্দ-উৎসবের। যার যা সাধ ও সাধ্যমতো ঘরে ঘরে আয়োজন চলবে আপ্যায়নের। শেষ দিন নববর্ষের পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) পালন করা হবে ‘গোজ্জেপোজ্যা দিন’। এদিন বিশ্বশান্তি ও সর্বজীবের মঙ্গল কামনায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে এবং মন্দিরে পালিত হবে ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় পালিত হবে মঙ্গলপ্রদীপ পূজা।