‘বন বাঁচলে, থাকবে পানি’ শহুরে পরিবেশ সচেতন মানুষ তথ্যটি জানতে শুরু করেছে এই কিছুদিন হলো মাত্র। কিন্তু গ্রামে? সেভাবে প্রচার-প্রচারণা নাথাকায় এখনো ব্যাপকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেনি। তবে অত্যন্ত জরুরি এ বার্তাটি পৌঁছে দিতে দ্রুত ও কার্যকরী উপায় বের করেছে রাঙামাটির বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘আশিকা ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস’। সংগঠনটি ৬টি স্কুলের শিক্ষার্থিদের নিয়ে আয়োজন করেছে ‘পরিবেশ বিষয়ক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা’। এতে ছবি আঁকতে গিয়ে উৎসাহি শিক্ষার্থিদের মননে যেমনি স্থায়ীভাবে ঠাঁই করে নিয়েছে বার্তাটি, তেমনি অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের কাছেও পৌঁছেছে।
সোমবার(৩০) মে দুপুরে সেই চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে প্রধান অতিথি হয়ে ছুটে যান রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য প্রিয়নন্দ চাকমা। রাঙামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়নের জীবতলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হলরুমে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানটির। পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা শেষে শিক্ষার্থিদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা মুগ্ধতা ছড়ায় অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আশিকা ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস এর নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা, কক্সী তালুকদার, জীবতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুদত্ত কারবারী। এতে সভাপ্রধান ছিলেন জীবতলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফয়সাল আহমদ। অনুষ্ঠান শুরুর আগে প্রধান অতিথি জীবতলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে বৈঠক করেন। এবং বিভিন্ন সমস্যা শুনে তার সমাধানের আশ্বাস দেন।
ইউএসএআইডি’র চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস ওয়াটারশেড কো-ম্যানেজমেন্ট এক্টিভিটি এর এ প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল ‘আশিকা ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস’। স্ট্রেনদেনিং ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন চিটাগাং হিলট্র্যাক্টস পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ এ প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে।
আশিকা ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস এর নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা বলেন, ‘পৃথিবীতে যতগুলো প্রাণীকূল আছে, তারমধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো মানবজাতি; মানুষ। মানুষেরাই পরিবেশ ধংসের মূল কারণ। সেক্ষেত্রে আমরা যদি আমাদের প্রজন্মকে এই মুহুর্ত থেকে সচেতন করে না তুলি, তাহলে আগামীতে আমাদের বিভিন্ন ধরণে সমস্যায় পড়তে হবে। ষড়ঋতুর এই দেশে তখন বর্ষার সময় বৃষ্টি হবে না। শীতের সময় শীত থাকবে না। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের ফসলী জমি আমরা রক্ষা করতে পারবো না। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে না পারলে আমাদের এই মানবকূল এই পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য নানা ধরণের হুমকির মুখে পড়বে’।
বিপ্লব চাকমা বলেন, ‘আমরা হয়তো নিয়মের গতিতে চলে যাব। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই হুমকির মুখে পড়বে। তাই আমরা যারা এই সমাজের জন্য, এলাকার জন্য চিন্তা করি জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক থেকে শুরু করে সমাজের যে যেখানে আছেন, নিজের অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থিদের এ ধরণে কার্যক্রমে যুক্ত করতে হবে’।
চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে জীবতলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জীবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাকছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দয়াময় পানছড়ি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গবঘোনা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধনপাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থিরা। এ প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন চিত্র শিল্পী ও শিক্ষক রাখী ত্রিপুরা।