পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির আইনে তিন পার্বত্য জেলার পর্যটন খাত জেলা পরিষদের অধীন। অথচ রাঙামাটির পর্যটন খাতে জেলা পরিষদের চলতি বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ; যার পরিমাণ ৬৮ লাখ টাকা। সরকার হতে উন্নয়ন, সংস্থাপন ব্যয় ও আপদকালীন খাতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য ৮৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী প্রস্তাবিত এ বাজেট ঘোষণা করেন। প্রস্তাবিত এই বাজেটে আয় হিসেবে উন্নয়ন ও সংস্থাপন খাতে সরকার থেকে ৮০ কোটি এবং পরিষদের নিজস্ব আয় তিন কোটি টাকা প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পর্যটন খাতের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হয়ে পর্যটন খাতে এই বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ কম রাখার পক্ষে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘পর্যটনের জন্য ১২শ কোটি টাকার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন থাকায় এই বাজেট আলাদা করে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি’।
তবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বক্তব্যে আপাতত সান্ত্বনা মিললেও তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। ২০১৬ সালে সরকার রাঙামাটির পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে ‘এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন’ গঠনের উদ্যোগ নেয়। সে সময় নির্দেশনা পেয়ে এর মাস্টার প্ল্যান ও ডিপিপি প্রস্তাবনাসহ প্রায় ১২শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ‘যাচাই-বাছাই শেষ করে প্রকল্পটি পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে বাদ দেয়া হয়। নতুন করে তিনশ কোটি টাকার মধ্যে আরও একটি প্রকল্প জমা দিতে বলা হলেও নানান জটিলতায় তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
পরিষদের নতুন বাজেটে ৮০ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ প্রাপ্তির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এছাড়া পরিষদের নিজস্ব খাত টোল, ট্যাক্স, ভূমি হস্তান্তর, বিশ্রামাগার ভাড়া, বিনিয়োগের সুদ, ঠিকাদার নিবন্ধন ফি ও বিবিধ নিজস্ব খাত থেকে তিন কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে।
মোট ১৩টি খাতে এই বাজেটের ব্যয় ধরা হয়েছে উন্নয়ন খাতে ৬৮ কোটি, আপদকালীন দুই কোটি, সংস্থাপন খাতে ১০ কোটি এবং বিভিন্ন খাতে তিন কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৭৭ কোটি ৬৭ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার। এবার তার চেয়ে ৫ কোটি ৩২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বেশি বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুইটি খাতে; শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ অবকাঠামোতে ১১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা করে। যা মোট বাজেটের ১৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে একক ধর্ম খাতে ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ ।
তৃতীয় স্থানে তিনটি খাতে রয়েছে স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ ও সুপেয় পানি, পূর্ত(গৃহ/অবকাঠামো নির্মাণ) এবং সমাজ কল্যাণ, আর্থ সামাজিক, প্রতিবন্ধী ও নারী উন্নয়ন খাতে ৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা করে, যা মোট বাজেটের ১২ শতাংশ ।
চতুর্থ স্থানে একক খাতে রয়েছে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ৬ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ১০ শতাংশ । ৫ম স্থানে একক খাতে রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ(বৃক্ষ রোপন, বনায়ন) খাতে ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের দুই শতাংশ ।
আর ৬ষ্ঠ স্থানে থাকা পাঁচটি খাতের মধ্যে , ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, ত্রাণ ও পুণর্বাসন, ভূমি ও হাটবাজার এবং পরিষদের আয়বর্ধক প্রকল্প খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে মোট বাজেটের ১ শতাংশ হারে, যার পরিমাণ ৬৮ লাখ টাকা করে।
পরে বাজেট নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।