মহাসমারোহে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও নানান আয়োজনে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস ২০২৩ উদযাপিত হয়েছে। আজ ২৬ মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ তারিখ সকাল ৯:০০ ঘটিকায় রাবিপ্রবির মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. কাঞ্চন চাকমা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ীভাবে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পরপরই রাবিপ্রবির বিভিন্ন বিভাগ,শিক্ষক সমিতি,কর্মকর্তা এসোসিয়েশন, কর্মচারী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এদিকে সকাল ১০:০০ ঘটিকায় দীপংকর তালুকদার একাডেমিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. কাঞ্চন চাকমা এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মাননীয় উপাচার্য তাঁর বক্তব্যের শুরুতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একইসাথে ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশলক্ষ শহীদ এবং দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সকল শহীদদের তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মম ও নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু লক্ষ মা বোনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছেন এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছেন। তিনি বাঙালিদের হৃদয়ে সাহস সঞ্চার করেছেন। বর্তমানে দেশের যত উন্নয়ন তার ভিত রচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতার দেখানো পথে বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাস্থ চন্দ্রঘোনা পেপার মিল এলাকায় শিশু অবস্থায় দেখা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন। তাছাড়া ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালো রাতে ইতিহাসের যে নারকীয় ও বর্বরোচিত গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তা যেনো আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পায় এবং প্রতিবছর ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক ভাবে সারাবিশ্বেই গনহত্যা দিবস পালিত হয় সে দাবী জানান। তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সম্মানিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জনাব মোহাম্মদ ইউসুফ, প্রক্টর জনাব জুয়েল সিকদার উপস্থিত ছিলেন।
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক জনাব ঋষিতা চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানগণের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান জনাব ধীমান শর্মা, হল সমূহের পক্ষ থেকে প্রভোস্ট জনাব সজীব ত্রিপুরা,কর্মকর্তা এসোসিয়েশন এর সভাপতি জনাব মাহাবুব আরা, কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জনাব কামাল হোসেন বক্তব্য রাখেন।
বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কোন অপশক্তি বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না। শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতির পিতা যে আদর্শ রেখে গেছেন তা সঠিকভাবে ধারণ, লালন ও চর্চা করতে হবে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ ও সম্প্রীতির বন্ধনে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেকে গড়ে তুলার আহ্বান জানান তারা।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বলেন, জাতির পিতা একটি শোষণ মুক্ত ও ধর্ম নিরেপক্ষ রাষ্ট্র গঠন করার লক্ষ্য নিয়ে দেশ পরিচালনা শুরু করেছিলেন কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট স্বাধীনতা বিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধু সহ তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে তা প্রচার করে। তিনি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও বুদ্ধি চর্চার উন্নয়নে নিজেকে সামিল করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম জোরদারের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৩ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সমূহের শিক্ষার্থীদের মাঝে ইফতার ও উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের আয়োজন করা হয়েছে।