গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ পানছড়ির অনিলপাড়ায় বিশেষ গোষ্ঠির মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা ও রুহিন ত্রিপুরা খুনীদের গ্রেফতারের দাবীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে নিহতের স্বজনরা।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি ২০২৪) পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনজন দাশ এর মাধ্যমে তারা এই স্মারকলিপি পেশ করেন।
ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সম্পাদক নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি হয়ত ইতিমধ্যে অবগত থাকবেন যে, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ রাত আনুমানিক সাড়ে ন’টার সময় ১০ — ১১ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অনিলপাড়ায় এসে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চকামা ও রুহিন ত্রিপুরাকে হত্যা করে।
এ সময় তারা অতুল চাকমার বাড়িতে রাত্রিযাপন করছিলেন, কারণ পরদিন ঐ এলাকায় একটি যুব সম্মেলনে তাদের অংশগ্রহণ করার কথা ছিল।
সন্ত্রাসীরা উক্ত নিরপরাধ চার জনকে খুন করা ছাড়াও আরও তিন জনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অবশ্য অপহরণের কয়েক দিন পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তারা উক্ত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।’
স্মারকলিপিতে ঘটনার এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও খুনিরা গ্রেফতার না হওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, খুনীদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য থাকা সত্বেও ঘটনার এক মাসের অধিক সময় পরও তাদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি‘বরং খুনীরা বুক ফুলিয়ে খুন করার কথা স্বীকার করে বিভিন্ন জনকে ফোন করছে এবং বিপুলদের মতো আরও অনেককে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
এ অবস্থায় আমরা অত্যন্ত আশঙ্কিত যে, অবিলম্বে তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া না হলে তারা খুনসহ আরও জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করতে পারে।
যাদের বিরুদ্ধে বিপুল চাকমাসহ চার জনকে খুনের অভিযোগ উঠেছে তারা আগেও খুন, অপহরণ, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, যা এলাকার সবাই অবগত।’
স্মারকলিপিতে তারা খুনিদের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি যে, খুনীরা বর্তমানে পানছড়ি বাজারের কাছে মানিক্যাপাড়ায় এবং ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়া নামক স্থানে অবস্থান করছে। নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হলে তারা অতি সহজে তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি।
‘সরকারের পক্ষ থেকে খুনীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অর্থাৎ হত্যাকারীদেরকে আইনের আওতার বাইরে থাকতে দেয়া হলে পানছড়ি এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলার আরও অবনতি ঘটবে এবং ফলতঃ আমরা সাধারণ জনগণ নিরাপদে ও নির্ভয়ে বসবাস করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবো।’
স্মারকলিপিতে তারা ৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো— (১) আপনার পক্ষ থেকে বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা ও রুহিন ত্রিপুরার খুনীদের গ্রেফতার করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হোক; (২) খুনীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক এবং (৩) খুনীদের মদদদাতা ও খুনের পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে তাদেরও বিচার করা হোক।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে ইউএনও অনজন দাশ ভিকটিমদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সংক্ষিপ্ত কথা বলেন। এ সময় তিনি উক্ত খুনের ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি বিষয়টি দেখবেন এবং স্মারকলিপিটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবেন বলে জানান।
এছাড়া তিনি স্মারকলিপি দিতে যাওয়া ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদেরকে কিছু কম্বল উপহার দেন।
স্মারকলিপি প্রদানকালে সুনীল ত্রিপুরার পিতা সুকেন্দু ত্রিপুরা ও ছোট ভাই গনেশ ত্রিপুরা; রুহিন ত্রিপুরার স্ত্রী বাষ্পরাণী ত্রিপুরাসহ তার ছেলে-মেয়েরা; লিটন চাকমার মা বালা চাকমা ও ভাই মতি বিকাশ চাকমা, কাথাং ত্রিপুরার স্ত্রী অলকা রাণী ত্রিপুরাসহ নিহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন ও স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন।