রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার ২নং গাইন্দা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কাইথাক পাড়া বাসিরা এক সপ্তাহ ধরে বুনো হাতির আতঙ্কে আছে বলের খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় পাড়াবাসীরা জানান, গত ২৭ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাঙ্গামাটি রাজস্থলী উপজেলা গেইন্দ্যা ইউনিয়নে বন্য হাতির আক্রমনে উচ্চসিং মারমা (৪৯) নামে একজনে মৃত্যু হয়। এর পর থেকে একদল হাতির পাল পাড়ার নিকট বর্তী সেগুন বাগান ও ফলজ বাগান আবস্থান করছে।
পাড়ার বাসী ক্যসাথোয়াই মারমা মুঠোফোনে জানান, রাতের অন্ধকারে পাড়ার নিকটবর্তী তে এসে পাড়াবাসীদের অনেকের কলাবাগান, ফসলি বাগান, বসত বাড়ী একাংশ, পাড়ির পাশে মুরগি ও শুকরের ঘর নষ্ট করে চলে যায়। হাতির পাল গত ২৭ফেব্রুয়ারী থেকে এখনো পাড়ার পাশে অবস্থান করছে হাতির পাল। এই পালে প্রায় ১০-১৫টি ছোটবড় হাতি আছে। আমার ১০০শতক কলাবাগানে তাণ্ডব চালিয়ে প্রায় দুই শতাধিক কলা গাছ ধ্বংস করে দিয়েছে হাতির পাল।
মংবুই মারমা (কারবারি) জানান, আমার ১০০শতক জমিতে কলাবাগানে তাণ্ডব চালিয়ে প্রায় ৬০০শতাধিক কলা গাছ ধ্বংস করে দিয়েছে হাতির পাল, ফলন আরো ভালো হলে গাছ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু হাতির আক্রমণে তা ভেস্তে গেছে। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন পরিশ্রমের ফলে তিল তিল করে গড়ে তুলেছি শখের কলাবাগান। বন্য হাতির আক্রমণে তা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় ৬০০টি গাছে উপড়ে ফেলেছে বন্যহাতির পাল।
এঞোই মারমা জানান, গত ০৪ ও ০৩ তারিখ রাতে রাজস্থলী উপজেলার ০২ নং গাইন্দ্যা ইউনিয়ন কাইথাক পাড়া এলাকায়, বন হাতির পাল তাণ্ডব চালিয়ে প্রায় ৯টি হাতি আমার কৃষি জমি ও গরুর মুরগী ঘরসহ কলা গাছ খেয়ে এবং ফসল মিষ্টি কুমরা হলুদ কচু ধ্বংস করে ফেলেছে বন্য হাতি পাল, আমার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ২লাখ ৫০হাজার টাকা, বর্তমান কাইথাক পাড়া এলাকাতে বন্য হাতি পাল আক্রমণের তাণ্ডব চালায়।
বাগান মালিক থুইহ্লাঅং মারমা জানান, গত ২৭তারিখ থেকে হাতির পাল আমার সারে চার একক জায়গাতে ৫০০টি কলা গাছ খেয়ে হাতি তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। কলা গাছ খেয়ে শত শত কলা গাছ উপড়ে ফেলেছে এবং বাগানে আক্রমণ চালিয়েছে হাতির পাল।
কাপ্তাই পাল্পউডের উপ-বন সংরক্ষক মোঃ সাজ্জাদুজ্জামান জানান, রাজস্থলী উপজেলার কেথাক পাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গত ১-২সপ্তাহ ধরে বনো হাতির পাল অবস্থান করছে। বনো হাতির দল সচরাচর বনে তাঁদের বিচরণ স্থান ও খাদ্যসংকট দেখা দিলেই লোকালয়ে চলে আসাটা স্বাভাবিক। রাঙ্গামাটির রাজস্থালী এলাকায় হাতির পাল ও একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বিধায় এ অবস্থা হয়েছে।
তিনি আরও যোগ করে বলেন, গতমাসে শুরুর দিকে রাজস্থলী উপজেলার উগানীপাড়া চিতাখোলা নামক এলাকায় একটি হাতির বাচ্ছার মৃত্যু হয়। এতে মা হাতিটি নিজের বাচ্চাকে খোঁজে প্রায় পাগল হয়ে আছে। তাই যে কোন সময় লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এবং সামনে যা পড়ে আক্রমণ করে বসছে। আমাদের নিয়মিত তদারকি ও তথ্যের মতে বর্তমানে সেখানে বাচ্চাহারা মা হাতিসহ মোট ৯-১০টির মতো হাতি অবস্থান করছে। রাজস্থলী রেঞ্জ কর্মকর্তার অধীনে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম হিসেবে মাইকিং চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যারা দরখাস্ত করেছে তাদেরকে উর্ধ্বতন কর্মকতা নিকট অবহিত করেছি। কোন বরাদ্দ আসলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে সহযোগিতা করা হবে।
তবে, বন উজাড় ও বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল ও খাদ্য সংকট কমে যাওয়ারয় বনো হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীরাও লোকাহয়ে চলে আসছে।