রাঙামাটিতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর খ্যাত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারিসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রাঙামাটি জেলা লংগদু উপজেলার কালাপাকুর্জ্যা ইউনিয়নের হোসেন পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ছিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ নানান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত একখানা অভিযোগ করে স্থানীয় মোঃ নুর উদ্দিন। এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লংগদু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে গত ১৫ মে ২০২৫ অভিযোগ দেওয়ার পর এখনও পর্যন্ত প্রতিকার পায়নি বলে গণমাধ্যমের কাছে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন মোঃ নুর উদ্দিন।
স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন ও মোঃ আবু সালাম বলেন, ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতিবাজ এই প্রধান শিক্ষক ২০১৬ সালে নারী রাঙামাটিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ধরা পড়ে। একই নারীর সাথে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাতে নাতে ধরা পড়ে শেষ পর্যন্ত ওই নারীকে বিয়ে করতে হয়েছে। পতিত সরকারের আমলে গত ১৬ বছর এই প্রধান শিক্ষক অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে। প্রতিবাদ করার মত কেউ ছিল না। যদি কেউ প্রতিবাদ করতো তাহলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে তাকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করতেন। তৎকালিন সময়ে নামে বেনামে বিদেশী দাতা সংস্থা ইউএনডিপি প্রকল্প হতে ৪-৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এছাড়াও স্কুলে কোমলমতি শিশুদের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পাশ্ববর্তী একটি দোকানে বসে প্রতিদিন আড্ডা দেয় এই প্রধান শিক্ষক। দোকানে বসে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের গুনগান করে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বা কেউ কিছু বললে তাদেরকে হুমকি ধমকি দেয় প্রধান শিক্ষক। তৎকালিন সরকারের আমলে শেখ রাসেল নামে পাঠাগার তৈরি করার জন্য জোরপূর্বক মানুষের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেয় ছিদ্দিক মাষ্টার। এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, প্রতারনা ও প্রভাব বিস্তার করে লোকজনদেরকে জিম্মি করে রেখেছে। এখনো স্থানীয় লোকজন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাদেরকে দেখাই দিবে বলে হুমকি দেয়। দুঃখজনক ব্যাপার একজন প্রধান শিক্ষক এতগুলো অনিয়ম-দুর্নীতি এবং নারী কেলেংকারী করে ধরা পড়ার পরও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জানিনা আমরা কোন দেশে বসবাস করি। ছিদ্দিক মাষ্টার আগে ফ্যাসিস্ট ও পতিত সরকারের লোক হলেও এখন বিএনপি সেজে গেছে। স্থানীয়দের দাবি তদন্ত পূর্বক ছিদ্দিক মাষ্টারের সুষ্ঠু বিচারসহ চাকরিচুত্য করা হউক।
কালাপাক্যুার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক দেওয়ান বলেন, হোসেনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিদ্দিকুর রহমান মাষ্টার গত কয়েক দিন আগে নারী রাঙামাটিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রাত ২টা বাজে ধরা পড়ে। ওনি নামে মাত্র শিক্ষক, মানসম্মান বলতে কিছুই নাই তার। এছাড়াও আরো অনেকে অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়েছে। ছিদ্দিক মাষ্টার পতিত সরকারের দোসর। তৎকালিন সময়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে অনেক দুর্নীতি করেছে। তিনি গত ১৬ বছরে ঠিক-ঠাক মত এক দিন স্কুলে ক্লাস করেনি। বর্তমানেও স্কুলে নিয়মিত ক্লাস ফাঁকি দিচ্ছে।
লংগদু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহনেওয়াজ বলেন, হোসেন পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ছিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দা নুর উদ্দিন বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছে। এব্যাপারে লংগদু শিক্ষা অফিস খুব দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবেন। ঘটনার সত্যত্য পাওয়া গেলে তাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এব্যাপারে জানতে হোসেন পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিদ্দিকুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ দিয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অভিযোগে নারী কেলেংকারীর কথা বলেছে তারা। কিন্তু আমি তো ওই নারীকে বিবাহ করেছি। বাকি সব তথ্য মিথ্যা।