প্রায় ১ শত ফুট উপর হতে আঁচড়ে পড়ছে ঝর্ণার পানি, আশেপাশে ১ কিঃ মি এলাকা জুড়ে সেই জলের প্রতিধ্বনি শুনা যাচ্ছে, যেন স্বর্গ হতে কোন অপ্সরী নুপুরের রুনু ঝুনু শব্দে তাঁর মোহনীয় কন্ঠে শুনিয়ে যাচ্ছে অপূর্ব গীত। যে গীতের দ্যোতনা হ্রদয়ের প্রতিটি তন্ত্রীতে তুলছে আনন্দজাগরণ। শুধু কি ঝর্ণার পানির শব্দ! তা নয়, ঝর্নার আশেপাশে হতে পাখির কিচির মিচির শব্দ, ঝর্ণার নীচে বয়ে ঝিরি ঝিরি পানির প্রবাহমানধারা নিমিষেই মনকে নিয়ে যায় কল্পলোকে।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ২ নং রাইখালী ইউনিয়ন এর ১ নং ওয়ার্ডের পানছড়ি মারমা পাড়াতে এই ঝর্ণার অবস্থান। ঝর্ণার উপরে মৈদং পাহাড়ে এই ঝর্ণার উৎপত্তিস্থল। বছরের সারা সময় ধরে এই ঝর্ণায় পানি থাকে। ঝর্ণার আশেপাশে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি ঝর্ণার দেখা মিলবে মূল ঝর্ণার আগে। রাইখালী ইউনিয়ন এর রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র পাড় হয়ে পাঁয়ে হেঁটে ঘন্টাখানেক পথ পাড়ি দিয়ে এই ঝর্ণায় পৌঁছানো যাবে। পথে মধ্যে ১ নং নারানগিরি পাড়া,জগনাছড়ি পাহাড়, জগনাছড়ি পাড়া, পানছড়ি মারমা পাড়া, সবুজ ক্ষেত, বিভিন্ন প্রকার ফলের বাগান, পাহাড়ের নান্দনিক সৌন্দর্য অবলোকন করে পানছড়ি ঝর্ণার দেখা মিলবে। তবে পর্যটকদের কাছে এটি এখনোও সুপরিচিত লাভ না করলেও মাঝে মাঝে বেশ পর্যটক আসেন এই ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
স্থানীয় মৈদং পাড়া ও পানছড়ি পাড়ার কারবারী মাইনু মারমা ও পানছড়ি মারমা পাড়ার বাসিন্দা অংক্যজাই মারমা জানান, ঝর্ণাটি দেখতে বেশ সুন্দর। তবে ঝর্ণায় আসার পথটুকু বেশ নাজুক। যদি সরকারের পক্ষ হতে অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানো হয় এইখানে বেশ পর্যটক আসবে।
২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শৈবাল সরকার সাগর জানান, পানছড়ি ঝর্নাটা অনেক আগের ঝর্ণা, দেখতে বেশ সুন্দর। পর্যটকেরা অবাধে আসতে পারলে এলাকার উন্নয়ন হবে।
গত শনিবার (২৭ আগস্ট) সকালে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান এবং উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা এই ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।
এই সময় ঝর্ণা দেখতে আসা কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন এবং উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিপু চন্দ্র দাশ জানান, রাইখালী এলাকার দূর্গম এই জায়গায় একটি সুন্দর ঝর্ণা আছে, আমরা না আসলে বুঝতেই পারতাম না, ভ্রমনপিপাসু যেকোন মানুষকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে। এই ঝর্ণায় আসার ঝিরিপথটুকু আরোও সুন্দর।
ঝর্ণা পরিদর্শনে আসা কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান জানান, প্রায় ২/৩ কিঃ মিঃ পাহাড়ি ও ঝিরিপথ ট্রেকিং করে আজ আমরা এখানে এসেছি। এতো দূর্গম জায়গায় এতো সুন্দর একটি ঝর্ণা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না এর সৌন্দর্যের পরিমাপ কতটুকু। আসার সময় বড় বড় পাথরের গাঁ বেয়ে পানি পড়ছে, ঝিরিঝিরি পথ সবটুকুই অনণ্যসাধারণ। অনিন্দ্যসুন্দর এ ঝর্নার রূপদর্শনে আমি সকলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।পর্যটকদের আগমন বাড়াতে এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মানের জন্য বিষয়টি আমি আমার উধ্বর্তন কতৃপক্ষের দৃষ্টিতে আনবো।