ভৌগলিকগত কারণে রাঙামাটির বরকল উপজেলার স্কুলগুলো পাহাড়ের উপরে নির্মিত। ফলে এ উপজেলার স্কুলগুলো পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হবার সুযোগ নেই।
কিন্তু পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ইমারজেন্সি তহবিল থেকে বরকল উপজেলায় চলতি অর্থ বছরে ১৫টি স্কুলকে দেওয়া ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বরাদ্ধ পাওয়া স্কুলগুলো হল রকবিবছড়া বটটলা সপ্রাবি ২,৫০,০০০ টাকা, তাগলক ছড়া সপ্রাবি (১) ২,৫০,০০০ টাকা,, তাগলক ছড়া সপ্রাবি (২) ২,৫০,০০০ টাকা,, ডলুছড়ি সপ্রাবি ২,৫০,০০০ টাকা, ভাইবোন ছড়া সপ্রাবি ২,০০,০০০ টাকা, কুকিছড়া সপ্রাবি (১) ২,০০,০০০ টাকা, কুকিছড়া সপ্রাবি (২)২,৫০,০০০ টাকা, বামে মহালছড়ি সপ্রাবি ২,৫০,০০০ টাকা, সুবান সপ্রাবি ২,০০,০০০ টাকা, কালাপুনছড়া সপ্রাবি ২,৫০,০০০ টাকা, ঠেগা চাদরা সপ্রাবি ২,০০,০০০ টাকা, চান্দবীঘাট সপ্রাবি ২,৫০,০০০ টাকা, ছোট হরিণা সপ্রাবি ২,৫০,০০০ টাকা,, ভালুক্যাছড়ি সপ্রাবি ২,৫০,০০০ টাকা, নিকসেন্দ্রা সপ্রাবি ২,৫০,০০০ টাকা,।
এগুলোর মধ্য ৭টি ভারত সীমান্তবর্তী বড় হরিণা ইউনিয়নে, ৫টি ভুষণছড়া ইউনিয়নে এবং ৩টি আইমাছড়া ইউনিয়নে। যেগুলো একেবারে দুর্গম এলাকায়। উপজেলায় সরকারী প্রাইমারী স্কুলের সংখ্যা ৮৩ টি।
বরাদ্ধ পাওয়া স্কুল প্রধানদের অনেকে বলেছেন তারা কোথাও আবেদন করেনি। শিক্ষা অফিস সবকিছু করেছে।
চাদারা ছড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধন কুমার চাকমা বলেন, পাহাড়ি ঢলে আমার স্কুল ক্ষতিগ্রস্তের সুযোগ নেই। আমি কোথাও আবেদন করিনি। শিক্ষা অফিস থেকে খবর পেয়ে গিয়েছি। আমার স্কুলের নামে ২ লাখ টাকা বরাদ্ধ আসে। এ থেকে আমাকে কিছু দেয়া হয়।
বরাদ্ধ পাওয়া স্কুলের এক প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার স্কুলটি পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হবারও সম্ভাবনা নেই। আমার স্কুলের নামে ২,৫০,০০০ টাকা বরাদ্ধ আসে। এ টাকা উত্তোলনের আগে টিইও স্যার অগ্রীম ১ লাখ টাকা নগদ নেন। এ টাকা আমি রিজার্ভ বাজারে টিইওর অস্থায়ী কার্যালয়ে তাঁর হাতে দিই।
নিকসেন্দ্রা সপ্রা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশীদ গত বছর বা এ বছর কখন তার স্কুলটি পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা বলতে পারেননি। বলেন, আমি আপনার সাথে দেখা করে বিস্তারিত বলব।
নিকসেন্দ্রা স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য সদস্য মো. আবু সালেহ বলেন, মিটিংয়ে প্রধান শিক্ষক বলেছেন টিইওকে টাকা দিতে হয়েছে। অবশিষ্ট টাকাগুলো দিয়ে সোলার কেনা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার উদয়ন চাকমা বলেন, বরাদ্ধ আনার পুরো কাজটি সমন্বয় করেছেন ভাইবোন ছড়া স্কুলের শিক্ষক বিমলেন্দু চাকমা। সে স্কুলে না গিয়ে সারাদিন টিইও স্যারের এখানে পড়ে থাকেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিমলেন্দুর স্কুলটি ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় দুই লাখ টাকা বরাদ্ধ পায়। অন্যদিকে বিমলেন্দু চাকমার স্ত্রী মনোনীতা চাকমা রকবিব ছড়া বটতলা স্কুলটিও বরাদ্ধ পায় আড়াই লাখ টাকা।
এ বিষয়ে মোবাইলে জানতে চাইলে বিমলেন্দু চাকমা বলেন এ টাকা ছাড় করাতে আমাকে এক টাকাও দিতে হয়নি। আমরা সব টাকা পেয়েছি। স্যার কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি।
বড় হরিণা ইউপি চেয়ারম্যান নিলাময় চাকমা বলেন, দুর্গমতাকে কাজে লাগিয়ে এ অনিয়ম করা হয়েছে। আমি জানি বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকরা বছরে দুই তিন দিন স্কুলে আসে। ভাইবোনছড়া স্কুলে শিক্ষার্থী আছে ৭ জন। শিক্ষক আছে ৩ জন। স্কুলটি এখন যেন পরিত্যাক্ত। এ নিয়ে আমি কথা বলায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে শিক্ষকরা নালিশ দিয়েছে নিলাময় জেএসএস করে।
ভুষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ ও আইমাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুবিমল চাকমা বলেন, যে স্কুলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেউ আমাদের বলল না। আর যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বলা হচ্ছে এগুলোতে পাহাড়ি ঢল হলে পুরো রাঙামাটি ভেসে যাবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বলেন, বরকলের স্কুলগুলো পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হবার সুযোগ নেই। যে স্কুলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বলা হয়েছে সে স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষক স্কুলে যান না। টিইওর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের শেষ নেই।
বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, যার টাকা তাকে দেওয়া হয়েছে। এর কাজ চলছে। জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি। পজেটিভ রিপোর্ট করলে খুশি হব।