খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার দুর্গম এলাকার নারী ও কিশোরীদের মাঝে পুনঃ ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি প্যাড বিতরণ এবং সচেতনতা কর্মসূচি শুরু করেছে পিঠাছড়া চিকিৎসা কেন্দ্র।
সোমবার (১২ জুন) সকাল ১১টায় মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাটিরাঙ্গার উপজেলার দুর্গম আটটি গ্রামের বাঙালি, ত্রিপুরা ও চাকমা জনগোষ্ঠীর ১০০ জন নারী ও কিশোরীর মাঝে পুনঃ ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি প্যাড তুলে দেওয়া হয়। এসময় নারীদের মাসিক চলাকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সহ স্যানিটারী প্যাডের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন , দেশের ৭০ শতাংশ নারী স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি প্যাড ব্যাবহার না করে পুরানো কাপড় ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে নারীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। ব্যয়সাধ্যতার কারনে অনেকে স্যানিটারী প্যাড কিনতে পারে না বলে কাপড় ব্যবহার করে। আর মাটিরাঙ্গার মতো পার্বত্য এলাকার নারী কিশোরীরা অনেক বেশি পিছিয়ে আছে নিরাপদ স্যানিটারি প্যাড ব্যাবহার থেকে। এই প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি পুনঃ ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি প্যাড নারীদের জন্য একটি দুশ্চিন্তামুক্তির কারন হতে পারে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা: রওশন মোর্শেদ বলেন, পিরিয়ড নারীদের একটি খুব সাধারণ ও প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া। এটিকে অনেকে সমস্যা বললেও এটি ঠিক সমস্যা নয়। দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়ের মতই সাধারন একটি বিষয় পিরিয়ড। কিন্তু সামাজিক ব্যবস্থাপনা এ বিষয়টিকে লজ্জাজনক ভাবে উপস্থাপনের কারনে লক্ষ লক্ষ নারী ও কিশোরীরা নানান জটিল অসুখে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও মা হওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। মাসিক শুরু হওয়ার পর বা চলাকালীন নারীদের কিছু বিশেষ সচেতনতায় পারে তাদের সকল জটিল রোগব্যাধি ও স্থায়ী ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে। এক্ষেত্রে পুনঃ ব্যবহারযোগ্য প্যাড নারীদের ব্যবহার করতে পারেন। যেটি সম্পূর্ন পরিবেশবান্ধব।
এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, মাটিরাঙ্গার পাহাড়ে বসবাস করা নারীরা প্রচুর পরিশ্রমী হয়, তাদের সুস্থ থাকাটা পরিবার ও নিজের জন্যে বিশেষভাবে জরুরী। পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র ও নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণির। একারনে পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতা থেকে থাকে। এই ক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব পুনঃব্যবহারযোগ্য প্যাড তাদের সেই সমস্যার কিছুটা হলেও অবসান করবে।
ইউএনও ডেজি চক্রবতী বলেন, সামাজিকভাবে এই মাসিকের বিষয়টি উপমহাদেশে অনেক আগে থেকে ট্যাবু হিসেবে প্রচলিত। এই কারনে নারীরা তাদের পরিবারে এই সমস্যা স্বাচ্ছন্দে প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন, এবং লুকিয়ে রাখেন। এসময় তারা পুরাতন কাপড় ব্যাবহার ও অসচেতনায় বিভিন্ন ভুল করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। নারীদের পাশাপাশি পরিবারের পুরুষদের এই বিষয়টি সহজভাবে গ্রহন করার কথাও এসময় তিনি উল্লেখ করেন।
পিটাছড়া চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মাহফুল রাসেল বলেন, প্যাড নিয়ে নারীদের সমস্যার কথা চিন্তা করে পিটাছড়া চিকিৎসা কেন্দ্র ২০২১ সাল থেকে এক বছর ধরে কাজ করে পুনঃব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি প্যাড ডেভলপ করেছে। এই প্যাডটি বারবার ধুয়ে অন্তত এক বছর ব্যবহার করা যাবে। এই প্যাড বছরে শুধুমাত্র ৭৮ বর্গফুট আবর্জনা তৈরি করে যেটি বাজারের অন্যান্য প্যাডের চাইতে ৭৫ শতাংশ কম। এই প্যাডটি দ্রুত পচনশীল বলে পরিবেশ বান্ধব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মাহফুজ রাসেল আরো বলেন, গত একবছরে মাটিরাঙ্গার আট গ্রামের সাড়ে পাঁচশ নারীর মাঝে পুনঃ ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি প্যাড বিতরণ করা হয়েছে। সামনে এই ধরনের কর্মসূচি চলমান থাকবে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বেলছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব-খেদাছড়া এলাকায় পিটাছড়া চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করা হয়। এই চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে উপজেলার বেলছড়ি ও গোমতী ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা গ্রহন করেন। উল্লেখ্য যে, পিটাছড়া চিকিৎসা কেন্দ্রটি ‘হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশন’ (হেলো) এর একটি স্বাস্থ্য প্রকল্প।
আয়োজনে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: খায়রুল আলম, বেলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রহমত উল্লাহ, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিটু দেওয়ান, পিছাছড়া পাঠাগারের সদস্য এবং স্থানীয় সচেতন মহলের নাগরিকবৃন্দ।