বান্দরবানের স্মরণকালে ভয়াবহ বন্যায় পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয়ে গেছে কৃষকের আবাদি ও অনাবাদি জমি।
টানা কয়েকদিন অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় পানিতে নষ্ট হয়েছে বীজ, ধানসহ কয়েক শতকোটি টাকার ফলজ ও সবজি বাগান। এতে সহায় সম্বল হারিয়ে ঋণের পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক।
এবারের ভয়াবহ বন্যার পানিতে জেলা সদরের চেয়ে লামা, আলীকদম ও রোয়াংছড়ি উপজেলার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরো জেলার যার ক্ষয়ক্ষতি পরিমান প্রায় ৩ শত ১০ কোটি টাকা জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সাল পর ২০২৩ সালে এসে বান্দরবানে ভয়াবহ বন্যায় সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনজীবনে বিপর্যস্ত নেমে পড়ে। এবারে ভয়াবহ বন্যা থেকে রেহাই পাইনি কৃষকের ফসলি জমি। বন্যার পানি স্বাভাবিক হতেই ভেসে উঠেছে কয়েকশত ফসলির জমি ক্ষতির চিত্র। সাত উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে কলা, বেগুন, পেঁপেঁ, ধান ও মাল্টাসহ বিভিন্ন রকমের ফলাদি বাগান। শুধু তাই নয় আঁউশ, আমন, রুপা আমনসহ বন্যার ভেসে গেছে কয়েক হেক্টর জমির বীজের ধান। এতে প্রান্তিক কৃষকেরা এখন চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেকেই ঋণের বোঝা নিয়ে দিনাদিপাত করছে।
বান্দরবান সদরে তংপ্রু পাড়া নুমাপ্রু মারমা বলেন, তিন বিঘা জমিতে ১ হাজার ২শ’ত পেপে চাষ আর ২ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছি। এবারের বন্যা আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে।
বান্দরবান সদরে গোয়েলাখলা পুরাণ ব্রিকফিন্ড এলাকা চাষি মো. ওসমান বলেন, দুই একর জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছিলাম। বন্যায় পানিতে তলিয়ে সব পঁচে গেছে। এই দুর্যোগে প্রায় তিন লক্ষ টাকার অধিক ক্ষয়ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছি।
আরেক কৃষক রোয়াজা পাড়া নিসা অং মারমা বলেন, কয়েকবছর ধরে ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ধান ও বিভিন্ন ফলজ চাষ করে আসছি। সেখান থেকে যা আয় হতো, সেটা নিয়ে সংসারে ভরণ পোষণ খরচ চালায়। দীর্ঘ বছর পর হঠাৎ বন্যায় পানিতে ধান পাশাপাশি ক্ষেতের টমেটো, ক্ষিরা, তিতকরলা, কাকরোল সহ পাহাড়িদের নিত্যদিনের সবজি নষ্ট হওয়ায় এখন ঋণের বোঝা নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় ৭১ হাজার চাষির ৮ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ৪ হাজার ৭৫৭ হেক্টর জমির বীজ ধান। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ৩১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আমন ও রোপা ধানের বীজতলা, কলা, পেঁপে, কাজুবাদাম, জুম চাষ, বিভিন্ন ধরনের মৌসুম সবজি।
অতিরিক্ত উপ- পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ এম. হাসান আলী জানান, এবারের বন্যায় নষ্ট হয়েছে তারমধ্যে রোপা আউশ, রোপা আমন, বীজতলা, রোপা আমন ফসল, গ্রীস্মকালীন সবজি ও সমতলে ফসল। ফলের মধ্যে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলা ও পেঁপে।
এই ভয়াবহ দুর্যোগে কৃষকদের যা ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। তাদের তালিকা তৈরি করছি এবং প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন বীজ ও সার বিতরণ কারার হবে।
এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রান্তিক কৃষকরা বিভিন্ন ব্যাংকে মাধ্যমে কৃষি ঋণ নিয়েছেন, ভুক্তভোগীদের যেন আগামী তিনমাসে জন্য ঋণ স্থগিত রেখে পরবর্তীতে শুরু করতে পারে, এই বিষয়ে বিবেচনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন ও অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করতে জেলার কৃষিবিধ কমিটিকে অনুরোধ করেছি।
পাশাপাশি কৃষিখাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার সরকারে ঋণ কর্মসূচি আছে, সেখানে ব্যাংকাদের অনুরোধ করেছি। যাতে দ্রুততার সাথে প্রান্তিক কৃষকের কাছে সহজ শর্তে ঋণটি পৌঁছে দেয়ার জন্য।