পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের কন্যা শিশু ও নারীদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা।
আজ শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩) জাতীয় কন্যা শিশু দিবসে রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের যৌথ উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালীর পরবর্তী আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
কর্মসূচি বানচাল করে দেয়ার লক্ষ্যে আজ সকাল থেকে উত্তর কুদুকছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে র্যালি সহকারে শতাধিক ছোট ছোট কন্যা শিশুরা নিজেদের তৈরি কাগজের বিভিন্ন রঙের ফুল হাতে নিয়ে অন্যায় অত্যাচারে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নিজের মাতৃভাষায় মুখরিত স্লোগানে পায়ে হেঁটে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। কন্যা শিশুরা কর্মসূচির মূল ভেন্যু কুদুকছড়ি বড় মহাপুরুম উচ্চ বিদ্যালয়ে ফটকে পৌঁছলে শিশুদের অপেক্ষারত মায়ের তুল্যা ৪ শতাধিক নারী তাদের স্বাগত জানান।
“আসুন, কন্যা শিশু তথা নারীর নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ হই” এই স্লোগানে সকাল ১১টায় রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়ি বড় মহাপুরুম উচ্চ বিদ্যালয়ে ফটকে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালী ও রাণী কালিন্দীর সাহসিকতা ও সুশাসন নিয়ে পথা নাটকের আয়োজন করা হয়। এতে ৫ শতাধিক কন্যা শিশু ও নারী অংশগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য র্যালী শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রিনিসা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা।
সমাবেশের নারী নেত্রী নীতি চাকমা- কালিন্দী রানী বীরত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, তেজস্বীনি নারী রাণী কালিন্দী ব্রিটিশ ঔপনেবিশক শাসকদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রাজ্য শাসন করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসক ক্যাপ্টন লুইন ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে রাণীর হাতে অপদস্ত হয়েছিলেন। নারী হয়েও তিনি প্রায় দেড় যুগ রাজ্যে শাসন করেছিলেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী সমাজের মধ্যে অনুপ্রেরণাকারী একজন। আমরা তাকে শ্রদ্ধা ও স্মরণ করছি।
তিনি পাহাড়ে নারী নির্যাতন, জনগণের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ না হলে নারী সমাজকে সংগঠিত করে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলে শাসকগোষ্ঠীর প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
রিনিসা চাকমা বলেন, ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। পাহাড়িরাও পাক্ বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও পাহাড়িদের পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে, তাদের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি মিলেনি।
তিনি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে এবং নারী সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারী নারীরা বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশ শেষে দালাল, প্রতিক্রিয়াশীলদের কুশপুত্তলিকা দাহ করার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।