দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩৩৩নং সংরক্ষিত নারী আসনে রাঙামাটির জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে তৃণমূলকে যথার্থ মূল্যায়ন হিসাবে এটিকে উপহার বলে দেখছেন জেলা, উপজেলাসহ দলটির নেতাকর্মীরা।
এতে তারা কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান দলটির প্রধান শেখ হাসিনাসহ মনোনয়ন বোর্ডকে।
১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ।
এতে ৩৩৩নং আসনে রাঙামাটির জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যাকে মনোনয়ন দেওয়ায় রাঙামাটিতে হঠাৎ বড় চমক আসে।
রাজনৈতিক পরিচয়ে জ্বরতী বর্তমানে রাঙামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে তার পরিচিতি বা রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পরিধি কেবল তৃণমূলের নিজ এলাকায় সীমিত হয়ে থাকলেও জাতীয় সংসদে দলীয় মনোনয়ন তালিকায় নাম প্রকাশে জ্বরতীর পরিচিতি তড়িত জাতীয় পর্যায়ে ছড়াল।
তৃণমূলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এ নারী নেতৃত্বের মূল্যায়নে পার্বত্য এলাকায় অবিশ্বাস্য চমক লাগে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যার জন্মস্থান জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায়। পরে বৈবাহিক সূত্রে রাঙামাটি সদরের জীবতলীর বাসিন্দা হন তিনি।
জ্বরতী পদ্ম মুনি তঞ্চঙ্গ্যা ও গুয়ামালা তঞ্চঙ্গ্যার মেয়ে। জানা যায়, জ্বরতী নাম এত দিন আড়ালে থাকলেও তারা অনেকটা পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত।
তার স্বামী তরুণ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা দীর্ঘদিন ধরে জড়িত আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতিতে।
বর্তমানে জীবতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি তিনি। অবশ্য জ্বরতী এর আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসাবে জীবতলী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বের দক্ষতা দেখে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ে তাকেঁ কার্বারী নিয়োগ দেন।
জ্বরতীর শ্বশুর স্থানীয় মৌজাপ্রধান হেডম্যান যতীন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য।
জীবতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্জুন তালুকদার বলেন, আমার ইউনিয়নের সম্পাদককে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ-সদস্য করায় আমরা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমাদের প্রিয় নেতা সংসদ-সদস্য দীপংকর তালুকদারসহ দলের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
আমরা সব সময় দলীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত। দলের প্রতি আমাদের আনুগত্য অনঢ়। আমি ২৬ বছর ধরে জীবতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছি। দীপংকর তালুকদারের নেতৃত্বে সামনে সব সময় দলকে এগিয়ে নিতে কাজ করব। তৃণমূলকে মূল্যায়ন করায় আমরা অত্যন্ত গর্বিত ও উজ্জীবিত।
দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাঙামাটি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপক বিকাশ চাকমা বলেন, আমাদের সংসদ-সদস্য দীপংকর তালুকদারের সুপারিশে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদর উপজেলার দুর্গম তৃণমূল থেকে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যাকে মনোনয়ন দিয়ে তৃণমূলকে মূল্যায়ন করে বড় ধরনের পুরস্কৃত করেছেন।
এজন্য আমরা খুবই গর্বিত, উজ্জীবিত ও উৎসাহিত। তিনি বলেন, আমরা তৃণমূলে মাঠে আঞ্চলিক দলের নানা বাধা-বিঘ্নসহ অনেক কিছু পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দলের রাজনীতি করি।
এসব মোকাবিলা করে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালাতে হয়। অতীতে এখানে তৃণমূলের কমিটিগুলো সাংগঠনিকভাবে খুব একটা শক্তিশালী হতে পারেনি।
তবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সবকিছু মোকাবিলা করে ইউনিয়ন কমিটিগুলোর সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করি। যার প্রতিফলন ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ এবং সদ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘটেছে।
এবার সংসদ নির্বাচনে আঞ্চলিক দলের বাধা পেরিয়ে সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এলাকা থেকে ১২ হাজারের অধিক ভোট দিতে পেরেছি।
এটা সাংগঠনিক কাজের বড় উন্নতি বলা যায়। কারণ ২০১৮ সালে সদর উপজেলার এসব এলাকা থেকে ভোট পাওয়া গেছে মাত্র ২ হাজারের মতো।
বর্তমান দলের সাংগঠনিক কাজের মূল্যায়ন হিসাবে দীর্ঘদিন পর এবার জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যাকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ-সদস্য মনোনীত করেছেন।
এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী ও জননেতা দীপংকর তালুকদারসহ দলের প্রতি আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই। সামনে তৃণমূলে দলকে আরও শক্তিশালী করে এগিয়ে নিতে চাই।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী রাঙামাটি থেকে সংরক্ষিত মহিলা এমপি মনোনীত করায় রাঙামাটিবাসী খুবই আনন্দিত।
আমরা রাঙামাটিবাসীসহ জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেত্রীকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এ মনোনয়ন তৃণমূলকে মূল্যায়ন।
এতে তৃণমুলের নেতাকর্মীদের দলের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসসহ দ্বায়িত্ববোধ বাড়াবে বলে মনে করি।
ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ব্যক্ত করে জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এটা কেবল আমাকে নয়- তৃণমূলকে মূল্যায়ন করে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উপহার এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন বলে আমি মনে করি।
এজন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত। আমি প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের প্রিয় জননেতা দীপংকর তালুকদারসহ দলের সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমার এ দায়িত্ব যদি অত্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে পারি তাহলে নিজেকে খুব সফল বলে ভাবব। আমি দলসহ এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করব- যাতে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্রুত সফল বাস্তবায়ন ঘটে। আমি সবার সহযোগিতা চাই।