খাগড়াছড়ির রামগড়ে ৪৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ২৫৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪৪টি বিদ্যালয়ের প্রায় ৯৩ জন শিক্ষক যুগ যুগ ধরে একই কর্মস্থলে রয়েছেন। তাঁদের বদলির ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হলে অজানা কারণে মাঝপথেই তা থেমে যায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই প্রতিষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের পদায়ন করে শিখন পদ্ধতিতে বৈচিত্র্য ও অভিনবত্ব আনলে অনগ্রসর এলাকার শিশু শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো বলে মনে করেন উপজেলার শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি সারা দেশে ২৬ হাজারের বেশি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়। সেই ঘোষণার আওতায় খাগড়াছড়ির রামগড়ে প্রথম ধাপে ১৫টি ও দ্বিতীয় ধাপে একটি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান একযোগে সরকারিকরণ হলে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের চাকুরীও জাতীয়করণ করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ১৯৯০ সালের কিছু আগে বা পরে প্রতিষ্ঠিত। সে হিসাবে ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকেরা এখনো কেউ কেউ একি বিদ্যালয়ে যুগের পর যুগ কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে ৭৬ জন একযুগ, ১৩ জন দুইযুগ এবং ১ জন ৩ যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত। কয়েকটি বিদ্যালয়ের দু-এক জন শিক্ষক বদলি হলেও অন্যগুলোতে সেই প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকেরাই রয়ে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চৌধুরীপাড়া, বলিপাড়া, সদুকার্বারীপাড়া, গর্জনতলী, পূর্ববলিপাড়া, চান্দ্রপাড়া, যৌথখামার, ভৃগুরাম কার্বারীপাড়া, রামগড় মডেল, সুকেন্দ্রপাড়া, লাচারীপাড়া, নিউ রামগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ১৯ টি বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠালগ্নের ও প্রথম কর্মস্থলের ৩৫ জন শিক্ষক এখনো সেখানেই শিক্ষকতা করছেন।
এ প্রসঙ্গে রামগড় সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও কলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের বলেন, ‘মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষক একই কর্মস্থলে তিন থেকে পাঁচ বছরের বেশি সময় থাকার সুযোগ নেই। এটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও হওয়া উচিৎ কিন্তু এখানকার প্রশাসনিক চাকরিবিধি ভিন্ন। ফলে দুর্ঘম এলাকার বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট লেগে থাকে অন্যদিকে শহরকেন্দ্রিক বিদ্যালয়গুলোতে অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছে যা মোটেও উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন শিক্ষক এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলির ফলে প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক উভয়েই লাভবান হয়। যদিও পার্বত্য এলাকায় শিক্ষক বদলির বিষয়টি জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করেন, তারপরও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইচ্ছা করলে অভ্যন্তরীণ বদলি কার্যক্রম করতে পারেন। বিদলির বিষয়টি আসলে সকলেই জেলা পরিষদের দোহাই দেন।’
এসব বদলি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন দাবী করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘যুগের পর যুগ একজন শিক্ষক একই কর্মস্থলে থাকলে নিজে যেমন অলস হয়ে যান, তেমনি শিক্ষার্থীরাও অভিনব শিক্ষা ও শিখন কৌশল থেকে বঞ্চিত হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও জেলা পরিষদ এ বিষয়ে গঠনমূলক চিন্তা করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি’।
রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘একজন শিক্ষক যুগের পর একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় তাঁর শিখন কলা-কৌশল, পদ্ধতি বা শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারছে না শিক্ষার্থী অভিভাবক ও সচেতন ব্যক্তিরা! জাতীয়করণ হওয়া এসব প্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষক রদবদল পক্রিয়া চালু হয় তাহলে শিক্ষার মান নিঃসন্দেহে আরও বৃদ্ধি পাবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি অচিরেই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান’।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকরা সেচ্ছায় বদলির আবেদন করলে সেটা করা হয় তাছাড়া কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অনিয়ম থাকলে সেটা বিবেচনা করে বদলি করা হয়। পারিবারিক সুবিধা সন্তানদের লেখাপড়া বিবেচনায় রেখে দীর্ঘদিন একি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকছেন তবে বদলী প্রক্রিয়া কোন নির্দেশনা পেলে আমরা সে ব্যবস্থা নেবো।’