হাসিনা পালানোর পর নতুন এক বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে। পালিয়ে গেছে অনেক সরকারি দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তারা। আজকের এই পরিবর্তিত বাংলাদেশে এখন আর কাউকে ঘুষ দিতে হয় না। তবে অনেক ঘুষখোর কর্মকর্তা এখন কাজে অনীহা দেখাচ্ছে। ঘুষ খেতে না পারায় কাজ স্লো করে দিয়েছে। সোমবার বিকেলে খাগড়াছড়ি টাউন হলে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ভূমি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ ও বিদ্যুৎ অফিসসহ প্রায় প্রতিটি সরকারি অফিসে বিগত ১৬ বছর ধরে লাগামহীন দুর্নীতি হয়েছে। অনিয়ম হয়েছে। ঘুষ ছাড়া কোন সেবা পায়নি সাধারণ নাগরিকেরা।
ঘুষখোর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে হাসনাত বলেন, ‘আপনাদের কত বেতন-ভাতা দেওয়া হবে তা জেনে বুঝেই সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছেন। যদি এখনও ঘুষ খাওয়ার আশা মনে পোষণ করে থাকেন তবে চাকরি ছেড়ে চলে যান।’
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি এই সরকারের মেয়াদে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠিত হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সকল খাতে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করা হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমন করা হবে যে, রাষ্ট্রপতি যেখানে চিকিৎসা নেবেন সেখানে একজন দিনমজুর, একজন তাঁতী কিংবা একজন রিক্সাওয়ালা চিকিৎসা নিতে পারবেন। আমরা বিশ্বাস করি অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের মেয়াদে শিক্ষা ব্যবস্থাটা এমন হবে যে, একজন মন্ত্রীর ছেলে যেখানে পড়ালেখার সুযোগ পাবে সেখানে একজন সাধারণ মানুষের সন্তানও পড়ালেখার সুযোগ পাবে। কোনক্ষেত্রেই কোন দুর্নীতি থাকবে না, বৈষম্য থাকবে না।’
আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে হাসনাত আবদুল্লাহ্ বলেন, ‘আমাদেরকে হিন্দু-মুসলিম কিংবা পাহাড়ি বাঙালির বিভাজনে ব্যস্ত রেখে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে গত ১৬ বছরে ১১ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। কারণ তারা জানতেন সাধারণ জনগণকে বিভাজিত করে না রাখলে সমাজ এবং রাষ্ট্রে স্থীতিশীলতা চলে আসবে। আর রাষ্ট্রে স্থীতিশীলতা আসলে জনগণ সরকারকে প্রশ্ন করা শুরু করে দেবে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, পাহাড়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে অধিকার বঞ্চিত। এখানে শুধু নাই আর নাই। পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় জনগণকে বিভিন্নভাবে বিভাজন করে অপ-রাজনীতি করেছে আওয়ামী লীগ। সময় এসেছে বৈষম্য দূর করার। পাহাড়ে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সকলকে সহনশীল হতে হবে।
গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, খাগড়াছড়ির বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখসারির ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলামসহ জেলার সম্বনয়ক এবং সাধারণ নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্যরা মত বিনিময় সভাস্থলে পৌঁছালে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।