রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ২ নং রাইখালী ইউনিয়ন এর অতিদুর্গম এলাকা ভালুকিয়া।
শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে থাকা এই জনপদে এলাকার শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যাক্তি ১৯৯৪ সালে দুর্গম অঞ্চলের মানুষদের শিক্ষার আলো ছড়াতে একটি নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ২৯ বছর পার হলেও এই বিদ্যালয়টি অদ্যাবদি এমপিওভুক্ত করা হয়নি।
যার ফলে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ- সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়টির শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের হতে যৎ সামান্য বেতন নিয়ে শিক্ষকদের মাসিক সম্মানী মেটানো হচ্ছে, যা বর্তমানে বাজারের সাথে অপ্রতুল। বর্তমানে শিক্ষকরা যা সম্মানী পান তা মাস শেষে গাড়ি ভাড়াও হয় না বলে জানান শিক্ষকরা।
অথচ এই এলাকার আশেপাশের ৬ থেকে ৭ কি: মি এর মধ্যে কোন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই। তাই এলাকার গরীব ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষার, বিশেষ করে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলে পড়তে হয়।
জানা যায়, এই স্কুলের শিক্ষকদের অর্থের যোগান করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠা হতে গ্রামের প্রতিটি ঘর থেকে অর্থ ও এক মুষ্টি চাউল উত্তোলন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাম মাত্র সম্মানীর মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিচালিত হয়ে আসছে।
এছাড়া ভালুকিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো অনেক দুর্গম যেমনঃ তিনছড়ি,পূর্ণবাসন,মিতিয়াছড়া,পানছড়ি,লাম্বাছড়া,নোয়াপাড়া,কালামাইস্যা,বটতলী,গংগ্রীছড়া,বাদামছড়ি,ছাকুয়াপাড়া সহ অনেক দুর্গম এলাকা। যেখানে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে এই একটি মাত্র বিদ্যালয়। তবে গতবছর বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হওয়ার আশা থাকলেও হয়নি। এতে চরম হতাশ হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষকগণ ও এলাকাবাসী।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সুব্রত বড়ুয়া জানান,১৯৯৪ সালে ভালুকিয়া এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রয়াত গোপাল চন্দ্র তনচংগ্যার উদ্যোগে তাহার নামীয় ১.৬০ একর জায়গা বিদ্যালয়ের নামে দান করে। এলাকার কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের নিয়ে ভালুকিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টটি তৎকালীন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওইসময়
বিনা বেতনে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা শুরু করেন দুলাল চন্দ্র তনচংগ্যা ও পরিমল তালুকদার। প্রথমদিকে মাত্র ৫ জন ছাত্র ছাত্রী নিয়ে বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে প্রায় ৯৪ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক রয়েছে। এছাড়া ২০০১ সালে বিদ্যালয়টির বিদ্যালয়টি রেজিঃ ভুক্ত হয়।
তিনি আরোও জানান, আমি ২০১৩ সালের দিকে জননেতা দীপংকর তালুকদার এমপি মহোদয় সহ গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে স্কুলটি এমপিওভুক্ত হবার জন্য বক্তব্য প্রদান করি। কিন্তু অদ্যাবধি স্কুলটি এমপিও ভুক্ত হয় নাই। তিনি স্কুলটি এমপিও ভুক্ত হবার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি কুতুবী ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি বর্ন বিকাশ তনচংগ্যা জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শ্রেণীভেদে মাসিক ৫০ টাকা হতে ৭০ টাকা বেতন নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৫ জন শিক্ষকের মাসিক সম্মানি মেটানো হলেও তা খুবই কম। যদি স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়,তাহলে সকলের দু:খ লাগব হবে।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রাক্তন সভাপতি ও কাপ্তাই ইউসিসিএ লিমিটেড (বিআরডিবি) চেয়ারম্যান স্বপন বড়ুয়া বলেন, খুব দুঃখের বিষয় হচ্ছে উক্ত বিদ্যালয়টি এখনও এমপিও হয় নাই। বর্তমানে কাপ্তাই উপজেলাতে নন এমপিও বিদ্যালয় শুধু মাত্র ভালুকিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। তাই আমি উক্ত বিদ্যালয়কে এমপিও করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সন্তোষ বড়ুয়া বলেন, আমরা অনেক দূর্গম এলাকায় হওয়ায় সরকারি অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এই বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হলে আমাদের অনেক ৮ থেকে ১০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে অন্য বিদ্যালয়ে পড়তে যেতে হয়। আমাদের বিদ্যালয় হতে শিক্ষা অর্জন করে অনেকজন উচ্চ শিক্ষিত ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো পদে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া ২০১৯ সালে আমাদের বিদ্যালয়টি জেএসসি পরীক্ষায় কাপ্তাই উপজেলায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। এই বিদ্যালয়টিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং দুর্গম এলাকায় শিক্ষার প্রসারে বিদ্যালয়টিকে এমপিওভুক্ত করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
গত ১৭ জুলাই সোমবার বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে। এসময় তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, দুর্গম এই অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে এই বিদ্যালয়টি অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছেন। আমি এসে জানতে পারলাম বিদ্যালয়টি এখনোও এমপিওভুক্ত হয় নাই। সরকার যেহেতু প্রতি বছর অনেক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করছেন,তাই বিদ্যালয়টি যাতে এমপিওভুক্ত হয়, সেই বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে আমরা চিঠি দিব।