টানা দুর্গা পুজার ছুটিতে পর্যটক শুন্য নিস্তব্ধ নীরবতায় রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলো। স্থানীয় বা দেশি বিদেশী কোন ধরনের পর্যটক নেই রাঙামাটি জেলাতে। একই ভাবে জেলার সাজেক ভ্যালি ও কাপ্তাই রিসোর্ট গুলোতেও পর্যটক শূণ্য। অপরুপ পাহাড়, ঝর্ণা ও কাপ্তাই হ্রদের চারপাশের প্রাাকৃতিক সৌন্দর্য সবসময় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করলেও এবার নেই কোন পর্যটক। নিস্তব্ধ আর নীরবতার বাতাস বইছে পর্যটক নগরী রাঙামাটিতে। নেই কোন দৌড়ঝাঁপ বা ব্যস্ততা। ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়ায় হাহাকার হয়ে পড়েছে পর্যটনসহ সব ধরনের ব্যবসায়ি পর্যটক খ্যাতে জীবিকা সংশ্লিষ্ট সকলে। সম্পতি পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করেই ধস নেমেছে রাঙামাটির পর্যটন শিল্পে। এরই জের ধরে কটেজ, হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, রেস্তোরা ও পর্যটন-নির্ভর অন্যান্য ব্যবসায়িদের দৈনিক কয়েককোটি টাকার মত ক্ষতি হচ্ছে।
এশিয়া মহা দেশের সর্ব বৃহত্তর কাপ্তাই কৃত্রিম হ্রদ, কর্ণফুলী পেপার মিল, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সবুজের সমারোহকে বলা হয় পর্যটকদের আকর্ষণের প্রাণকেন্দ্র। এখানে মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের যেন মিতালি দেখার জন্য সাজেক ভ্যালি ও শিলছড়ি সীতা পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত, পরবর্তীতে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ও জানমালের ক্ষতি এড়াতে পাহাড়ি এলাকায় লোকজনের অবাধ চলাচলে সাময়িকভাবে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয় পর্যটকদের। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পর্যটক শুন্য হয়ে পড়ে।
হলিডে কমপ্লেক্স, রিসোর্ট, হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও রেস্তোরা গুলোতে এখন তেমন কোন পর্যটকের দেখা মিলছে না। এতে রাঙামাটি শহর, সাজেক ভ্যালি ও কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন পর্যটক খ্যাতে অর্থনৈতিক মন্দার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে লোকসান গুনতে হচ্ছে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরা গুলোকে।
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, এই ২৩-২৪ দিনে আমার প্রায় কোটি টাকার উপরে লোকসান হয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাঙালি সংঘাত সহিংসতায় অনেক লোকসান হয়েছে। দুর্গা পুজায় টানা বন্ধে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটক আগমনে নিরুৎসাহিত করায় আমরা লোকসানে পড়েছি।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, গত ২ মাস ধরে রাঙামাটি পর্যটক খাতে ও আবাসিক হোটেল মোটেল গুলোতে ১৫-২০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এ লোকসান কাটিয়ে উঠতে ব্যবসায়িদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পর্যটন ব্যবসার সাথে হোটেল রেস্তোরাসহ অন্যান্য আরো অনেক কিছু জড়িত রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বড় ধরনের এক ধাক্কা বয়ে যাচ্ছে আমাদের উপর।
কাপ্তাই নিসর্গ হাউজ পট এর ম্যানেজার মাসুদ বলেন, কাপ্তাই এখন পর্যটক শূন্য বললেই চলে। প্রথম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, তার পর স্থানীয় ছাত্র আন্দোলন,পরে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি বাঙালি সংঘাত সংঘর্ষ এর পর রাঙামাটি শহরে পাহাড়ি বাঙালি সহিংসতা। সবকিছু মিলিয়ে পর্যটন খ্যাতে ধস নেমে এসেছে। মনে করেছিলাম শীতের আগমনে এবার একটু ঠিকঠাক মত ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবো। এবার টানা দুর্গা পুজার বন্ধে নেই কোন পর্যটক। তাই মন ভাল নেই এই পেশার ব্যবসায়িদের।
কাপ্তাই হ্রদের ইঞ্জিল চালিত বোট মালিক সমিতির ম্যানেজার শীতল কান্তি বলেন, গত ১৫ দিন ধরে ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র আপস্টিম জেটিঘাটেও কোন পর্যটক আসেনি। ব্যবসার প্রতিটি খাতে যে সকল শ্রমিক কর্মচারী সম্পৃক্ত তাদের উপার্জনও কমে গেছে। সব মিলেয়ে তাদের কয়েক কোটি টাকা আয় করা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা। এটা একটা বড় ধাক্কা বললেই চলে। তারা আরও বলেন, শান্তি পাহাড়ে যারা অশান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলারক্ষাবাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। এভাবে চললে আমরা বাঁচবো কী করে? এ ভাবে তো বেশি দিন চলা যায় না।