বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহছান উল্লাহ বলেছেন, বাংলাদেশ জন্মের পর থেকে ষড়যন্ত্র চলছে। আওয়মীলীগ গনতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা। ৭৩ সালের নির্বাচনে জাসদ জয়লাভ করলেও সারাদেশ থেকে ভোটার বকস ঢাকায় নিয়ে নিজেদের দলের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষনা করে।
তিনি বলেছেন এদেশের মানুষ আর আওয়ামীলীগের নাম মুখে নিবেনা এবং আওয়ামীলীগ বাংলার জমিতে আর আসতেও পারবে না। বিগত সতের বছরে এদেশের সবকিছু ধবংস করে দিয়েছে। এখানে আধিপত্যবাদ, সন্ত্রাসবাদ, এখানে পরিবারতন্ত্র আর চলবে না। ‘আল্লাহ ছাড়া সৃষ্টি জগতের মানুষের ওপর কারো আইন চলতে পারে না। তাই আমরা আল্লাহর আইন চালু করতে চাই। কাজেই আল্লাহর বান্দাদের ওপর আল্লাহর আইন চালু করতে হবে’। জামায়াতের এই নেতা বৈষম্যহীন, ন্যায় ও সকলের অধিকার নিশ্চিত করতে জামাতকে বিজয়ী করে একটি কল্যাণ ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম করার আহবান জানান।
তিনি শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কাউখালী উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাউখালী উপজেলার উদ্যোগে কর্মী সন্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন তিনি।
দীর্ঘ দুই দশক পরে কাউখালী উপজেলায় কর্মী সম্মেলন করেছে উপজেলা জামায়াত। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা। এর আগে সর্বশেষ ২০০৪ সালে কর্মী সম্মেলন করে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাউখালী উপজেলার সভাপতি মাওলানা আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেনের সঞ্চলনায় অনুষ্টিত উক্ত কর্মী সন্মেলনে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় মজলিস শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমীর আলাউদ্দিন সিকদার, রাঙ্গামাটি জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম, ২৯৯ নং রাঙ্গামাটি আসনে জামাত মনোনীত প্রাথী অ্যাডভোকেট মোখতার আহম্মদ, রাঙ্গামাটি জেলা সেক্রেটারী মনছুরুল হক, রাঙ্গামাটি জেলা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম সাফি প্রমূখ।
ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধবংস করে দিয়েছে—আলাউদ্দিন সিকদার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় মজলিস শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমীর আলাউদ্দিন সিকদার বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের কোন ভাগ্যর পরিবর্তন হয়নি। ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধবংস করে দিয়েছে। যার কারনে সকল ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে পরিনত করতে হয়, তাহলে ইসলামের কোন বিকল্প নেই। সেখানে সকলের অধিকার সংরক্ষিত থাকবে। ‘আমরা দুনিয়ার কল্যাণ চাই, আখেরাতের কল্যাণও চাই। কাজেই আল্লাহর কোরআনের আইন চালু নাহওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাস নির্মূল হবে না।
১৯৭১ থেকে ২০২৪ এই ৫৪ বছরে প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়েছে—অ্যাডভোকেট মোখতার আহম্মদ
২৯৯ নং রাঙ্গামাটি আসনে জামায়াত মনোনীত প্রাথী অ্যাডভোকেট মোখতার আহম্মদ বলেছেন, ১৯৭১ থেকে ২০২৪ এই ৫৪ বছরে প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়েছে। এই সময়ে কোন নির্বাচনে স্বচ্ছভাবে করে কেউ নির্বাচিত হতে পারেনী। সবসময় সাধারন মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, দাড়ি টুপি দেখলে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন হয়রানী করে শত শত লোককে হত্যা করা হয়েছে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর নারকীয় হত্যাযঞ্জের মাধ্যমে মইন উদ্দিন ফখরুদ্দিনরা ক্ষমতা দখল করে দেশের গনতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ নিরপেক্ষ নির্বাচন করে কখনো ক্ষমতায় আসতে পারেনী। ২০১৪ সালে বিনাভোটে নির্বাচন,২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে নিয়ে নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে তথাকথিত দলীয় একক নির্বাচন করে ক্ষমতা গ্রহন করে। কিন্ত সেই ক্ষমতা আর চিরস্থায়ী হয়নি। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। ভারত এদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এটা হতে দেয়া হবে না। এই দেশের মানুষ আর ফ্যাসিস্টদের নাম মুখে নিবে না। ভারতের সাথে ফ্যাসিস্ট হাসিনার করা বন্দিবিনিময় চুক্তির আলোকেই হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নইলে দেশের অশান্তি দূর হবে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাঙ্গামাটি জেলার সেক্রেটারী মোঃ মনছুরুল হক বলেছেন,১৯৭১ সালে এদেশে মুক্তিযুদ্ধ হলেও ফ্যাসিস্ট সরকার মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাসকে হাইজাক করেছে। মুক্তিযুদ্ধ কোন একক দল বা ব্যক্তির জন্য হয়নি,মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে পুরো বাংলাদেশের জন্য। তিনি আগামীতে কোরানের সমাজ কায়েম করার লক্ষে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে দেশ গঠনে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
জামায়াতে ইসলামী রাঙ্গামাটি জেলার শুরা ও কর্ম পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ বলেছেন,বিগত সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে পুরো বাংলাদেশের এমন কোন এলাকা পাওয়া যাবেনা যেখানের মানুষ শান্তিতে ছিলো। জামাত বিএনপির শত শত নেতা কর্মীকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে। তিনি বলেন ১৩ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ধুঁকে ধুঁকে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাকে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মুক্তি না দিলে এদেশের জনতা আবারো মাঠে নামবে। জামায়াতের এই নেতা আরো বলেন, প্রতিনিয়ত নির্যানের স্বীকার হয়েছে কাউখালী উপজেলার জনসাধারন। এ উপজেলার মানুষকে ভালোভাবে ঘুমাতে দেয়নি। এই জেলার হত্যার রাজনীতি কাউখালী হতে শুরু হয়েছে । ফ্যাসিস্টদের দোসররা হাসপাতালের অ্যামবুলেন্স গাড়ি পুড়িযে বিএনপি জামায়াতের নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছে। তিনি ফ্যাসিস্টদের এসব দোসরদের যেখানে পাওয়া যায় সেখানেই আইনের হাতে তুলে দেয়ার আহবান জানান।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির রাঙ্গামাটি জেলার সভাপতি মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম শাফি বলেছেন,ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগউপযোগী করে তোলার জন্য নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি বলেছেন বিগত সময়ের মতো বর্তমানেও ছাত্র শিবিরের নাম মুছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি এসব ছাত্র সংগঠনের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন জুলাই আন্তোলনের ফলে দেশের স্বৈরচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সকলে মিলে যখন বিতারিত করেছি তাই আমরা সকলে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি ২৯৯ নম্বর আসনে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোখতার আহম্মদ ও চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ আসনের প্রার্থী আলাউদ্দিন সিকদারকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
