রাঙামাটিতে মাছের ঘেরে জাল ফেলাকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ এনে রাঙামাটি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের হ্যাচারি পাড়ায় মারামারির ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন হ্যাচারি পাড়ার ভুক্তভোগিরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় হ্যাচারি পাড়া নিবাসী শাকিলের বাসার সামনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় এলাকার বহু নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। ভুক্তভোগিদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোঃ ইকবাল হোসেন। সম্মেলনে হ্যাচারি পাড়ায় সংঘর্ষের মূল সমস্যা মাদক নয় বরং মাছের ঘেরে জাল ফেলাকে কেন্দ্র করে দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইকবাল বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে হ্যাচারি পাড়ায় একটি মাছের ঘের নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ দু’গ্রপের মধ্যে ঝামেলা বিরাজ করছে। পরে ওই মাছের ঘেরকে কেন্দ্র করে হ্যাচারি পাড়া এলাকার লোকজনের মধ্যে বিরাট সংঘর্ষ বাধে। গত ১১মার্চ ৮টার দিকে এলাকাবাসীর মধ্যে দাওয়া পাল্টা দাওয়া ও মারামারি বাধে। এসময় সংঘর্ষে দু’পক্ষের মধ্যে হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে প্রথম পক্ষ মোঃ হানিফ ও মান্নান গ্রুপ মামলা করলে ওই মামলায় নিরীহ শাকিলকে আটক করা হয়। এছাড়া মিথ্যা মামলা এলাকার সাধারণ লোকজন কেও জড়ানো হয়। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, হ্যাচারি পাড়ার মোঃ ইকবাল হোসেন, মোঃ রশিদ, রতনের মেয়ে রিতা আক্তার, মোছাঃ হালিমা, শারমিন আক্তার ও বিবি ছালেহা বেগম।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, পৌর বিএনপি’র সহসাংগঠনিক সম্পাদক হানিফ, বিএনপি’র সহপ্রচার সম্পাদক মোঃ শাহিনসহ অন্যান্যরা আমাদের বিরুদ্ধে ইয়াবাসেবন, চুরির ঘটনা সম্পর্কিত যে রিউমার ছড়িয়ে পুলিশ প্রশাসন ও মিডিয়াকে তথ্য দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ভুয়া। হ্যাচারি পাড়ায় সংঘর্ষের মূল সমস্যা হলো মাছের ঘের ঘিরে। তাদের মিথ্যা মামলার কারনে এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় দিনতিপাত করছি। আমরা থানায় গিয়ে ছিলাম থানায় আমাদের মামলা নিচ্ছে না। আমরা এঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ ন্যায় বিচার দাবি করছি।
অভিযোগ করে হালিমা খাতুন বলেন, অন্যায় ভাবে হানিফসহ আরো অনেকে আমাদের লোকজনদের মারধর করেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে এটার সুষ্ঠু বিচার চাই। হ্যাচারি পাড়া এলাকায় মাছের ঘের নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে এই মারামারি সৃষ্টি হয়। এঘটনায় এলাকার নিরীহ লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন এলাকার প্রায় লোকজন পলাতক রয়েছে। এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে বিএনপি’র লোকজন।
অন্যদিকে এবিষয়ে জানতে চাইলে পৌর বিএনপি’র সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হানিফ বলেন, শাকিল ও হেলার মাদককারবারী।এব্যাপারে তাদেরকে আমরা সর্তক করতে গিয়ে হ্যাচারি পাড়া মারামারি বাধে। তারা সবসময় এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আমরা তাদের এই অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা মারধরের শিকার হয়েছি।
এব্যাপারে বিএনপি’র সহপ্রচার সম্পাদক মোঃ শাহিন বলেন, দীর্ঘ ১৬বছর ধরে আওয়ামী লীগের হাসপাতাল এলাকার নেতা বাবু চক্রবর্তী ওই মাছের ঘেঁর ভোগ করে আসছে। এখন আমরা এই মাছের ঘেঁরটাকে ঠিকঠাক করে মাছ ধরার উপযোগি করতে যাচ্ছি। আসল বিয়ষ সেটা না, আসল বিষয় হলো শাকিল ও হেলাল প্রকৃত ইয়াবাসেবনকারী। কেন আমরা ইয়াবা নিয়ে প্রতিবাদ করলাম এটাই আমাদের অপরাধ। এটা নিয়েই হ্যাচারি পাড়ায় সংঘর্ষ হয়েছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার ওরফে দীপু বলেন, মূলত মাছের ঘের নয়- ওই এলাকায় মাদক কারবার ও সেবন নিয়ে সালিশকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে আমি শুনেছি।
এই ঘটনায় জেলা তাতী দলের সদস্য মোঃ ইসহাক ৮-৯ জনের নামসহ অজ্ঞাত ২৫-৩০জনের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় জেড়ে শাকিলকে আটক করে পুলিশ। বর্তমানে শাকিল জেলহাজতে আছেন।
এব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ মাহমুদ খান বলেন, ১১মার্চ রাতে শহরের হ্যাচারি পাড়া এলাকায় দু’গ্রুপের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছে তাতে যারা মার খেয়েছে তাদের পক্ষ হতে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় ওই মামলায় শাকিল নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে আজকে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা আইনী সহযোগিতা পেতে থানায় আসেনি। থানায় আসলে আইনী সহযোগিতা দেওয়া হবে।