দেশের ১৫তম ও পার্বত্যাঞ্চলের প্রথম রামগড় স্থলবন্দর দ্রুত চালুর জোর দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে রামগড় পাহাড়াঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র মিলনায়তনে রামগড় উপজেলার সুশীল সমাজের আয়োজনে প্রাচীন মহকুমা শহর রামগড়ের মর্যাদা পুনরুজ্জীবিত ও উন্নয়ন ভাবনা শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার একবাক্য চলমান রামগড় স্থলবন্দর দ্রুত চালু করে ইমিগ্রেশন ও পরিবহন সুবিধাসহ পুর্নাঙ্গরূপে এ বন্দরটি চালুর দাবী করা হয়।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ির সাবেক সাংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূইয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, রামগড়ের উন্নয়নের কথা এলেই এক শ্রেণী কোননা কোন ইস্যু দাড় করায়। স্বাধীনতার ৫৫ বছর পরও কেন নিরাপত্তার অযুহাত তুলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অপার সম্ভাবনাময় স্থলবন্দর বাধাগ্রস্থ হবে বলে তিনি প্রশ্ন তুলেন। তিনি আরো বলেন, ১৯২০ সালের সাবেক মহকুমা শহর রামগড়ের অতীতের মর্যাদা হারিয়েছে, রামগড় ছোট হতে হতে বর্তমানে দুইটি ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এখন বন্দর নিয়ে আলোকিত হওয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছে এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবেনা। ২০০২ সালে তিনি প্রথম এ বন্দর চালুর জন্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি শুরু করেছিলেন। এজন্যে পাহাড়ি-বাঙ্গালী এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সকলকে ভেদাভেদ ভুলেগিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।
ব্যবসায়ী নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, শেষদিকে এসে কেন নিরাপত্তার অযুহাত তুলে এমন সম্ভাবনাময় বন্দর নিয়ে শংকা তৈরী হবে। দেশে আরো বহু বন্দর রয়েছে বন্দরতো সীমান্তেই হয়। প্রয়োজনে বন্দর ইস্যুতে পতিত স্বৈরশাসকের একপক্ষীয় চুক্তির পূর্ণ মূল্যায়ন করে দেশের স্বার্থ রক্ষা করে এ বন্দরের চলমান কাজ দ্রুত শেষ করে চালুর দাবী করছি।
সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন লাভলু’র সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় সুশীল সমাজ, বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় ইমাম ও গুরু, শিক্ষক, ব্যবসায়ি, হেডম্যান- কারবারি, গন্যমান্যব্যাক্তিবর্গ, জেলা- উপজেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ-সামাজিক- সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গত, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে গত ১২ জানুয়ারী নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সরেজসিনে রামগড় স্থলবন্দর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রামগড় স্থলবন্দর থেকে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে তা নিরূপণে একটি কমিটি গঠনের কথা জানান। পরে ১৫ জানুয়ারী নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিদুল ইসলামকে আহবায়ক করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে এ সংক্রান্ত একটি সংক্ষিপ্ত অফিস আদেশ জারি করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
পরবর্তীতে ২৬ ফেব্রুয়ারী নো-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও গঠিত কমিটির আহ্বায়ক মো. মুহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটি রামগড় স্থলবন্দরের ভৌগোলিক অবস্থান, আন্তঃদূরত্ব, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, রাজস্ব আয়, যাত্রী আগমন ও বহির্গমন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা যাচাই সংক্রান্ত কমিটি রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণাধীন অবকাঠামো পরিদর্শন ও স্থলবন্দর অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। ওই সভাতেও স্থানীয়রা দেশের স্বার্থ রক্ষা করে এই বন্দরের বাকী কাজ শেষ করে দ্রুত চালুর দাবী জানানো হয়।
এরআগে ১২ জানুয়ারী নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন রামগড় স্থলবন্দর পরিদর্শনে এলে তার সফরসঙ্গী প্রকল্প চেয়ারম্যান সরওয়ার আলম জানান, বর্তমানে বন্দরের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কোন জটিলতা সৃষ্টি না হলে আগামী জুন শেষে এ বন্দর চালু করা সম্ভব।