জাতীয় নাগরিক পার্টির (NCP) উদ্যোগে রাঙ্গামাটিতে সার্চ কমিটি গঠন ও পার্বত্য রাজনৈতিক ঐক্য গঠনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ (১৪ মে, মঙ্গলবার) রাঙামাটিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP) এর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক তত্ত্বাবধায়ক ইমন সৈয়দের নেতৃত্বে এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সফর অনুষ্ঠিত হয়। এই সফরের উদ্দেশ্য পার্বত্য রাঙ্গামাটি জন্য সাংগঠনিক ভিত্তি পুনর্গঠন, সার্বিক রাজনৈতিক সংলাপ এবং একটি শক্তিশালী ও কার্যকর জেলা সার্চ কমিটি গঠন করা।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ধারাবাহিক মতবিনিময় ও পরিকল্পনা সভায় রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত বাঙালি ও পাহাড়ি সংগঠক ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা হয় স্থানীয় বাস্তবতা, সাংস্কৃতিক পার্থক্য, রাজনৈতিক বৈচিত্র্য, এবং পাহাড়ি-বাঙালি সহাবস্থান ও যৌথ রাজনৈতিক কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে।
সভায় সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে ৩১ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তীকালীন “সার্চ কমিটি” গঠন করা হয়। এই কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি বর্ণাঢ্য জেলা সমাবেশের আয়োজন করবে এবং আনুষ্ঠানিক আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা দেবে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলা ভিত্তিক প্রতিনিধি নির্বাচন ও সমাবেশ আয়োজনের দায়িত্বও এই কমিটিকে অর্পণ করা হয়।
সার্স কমিটির সদস্যবৃন্দ:
১. বিপিন জ্যোতি চাকমা, ২. মোহাম্মদ লোকমান হাকিম, ৩. উজ্জ্বল চাকমা ৪. জাকির হোসেন চৌধুরী, ৫. প্রিয় চাকমা, ৬. মোঃ শাকিল, ৭. দিবাকর চাকমা, ৮. মোঃ শাহজাহান, ৯. মোঃ শহিদুল ইসলাম, ১০. নতুন মানা চাকমা, ১১. মনি আক্তার, ১২. সায়েদা ইসলাম সাদিয়া, ১৩. মোঃ ইমাম হোছাইন ইমু, ১৪. মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, ১৫. তানভী রহমান, ১৬. সুরেশ চাকমা, ১৭. শান্তি কুমার চাকমা, ১৮. ড্যানিয়েল চাকমা, ১৯. নুর হোসেন, ২০. মং প্রু মারমা, ২১. আবুল কালাম আজাদ, ২২. মোঃ সজিব, ২৩. আব্দুল করিম, ২৪. এরিক চাকমা, ২৫. রাবিয়া আক্তার, ২৬. বিপুল চাকমা, ২৭. এ কে এম ইসরাইল, ২৮. মোঃ নাজমুল হক, ২৯. সুমেন চাকমা, ৩০. বিনয় সাধন চাকমা ৩১. উসাপ্রু মারমা।
সভার প্রতিটি পর্বে পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক অবস্থা, সাংগঠনিক সংকট, জাতীয় রাজনীতিতে পার্বত্য অঞ্চলের অংশগ্রহণের সীমাবদ্ধতা, উন্নয়ন-বঞ্চনা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রতিনিধিগণ পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে তারা পাহাড়ি ও বাঙালি জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রস্তাবনা দেন। বক্তারা বলেন, “সাম্প্রদায়িকতা নয়, সমঅধিকারের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত উন্নয়ন মডেলই পারে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি ও প্রগতি নিশ্চিত করতে।”
পাহাড়ি ও বাঙালি প্রতিনিধিদের ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মতামতগুলোর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য দিক ছিলঃ
১. নারী প্রতিনিধিত্ব এবং ছাত্র আন্দোলনকে সমন্বিতভাবে সংগঠিত করার আহ্বান।
২. পার্বত্য অঞ্চলের জন্য বিশেষ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রূপরেখা গ্রহণ।
৩. ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্তির জোরালো দাবি।
৪. উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সচেতনতা, সংগঠন ও নেতৃত্ব বিকাশে একীভূত পরিকল্পনা।
৫. তরুণদের নেতৃত্বে আনার মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা।
বিকেল ৪টায় দ্বিতীয় দফায় “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন”-এর ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে একটি যৌথ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র প্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এই সভায় ছাত্র প্রতিনিধিরা পার্বত্য অঞ্চলের বৈষম্য, সুযোগের সীমাবদ্ধতা, শিক্ষাগত ও রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলো তুলে ধরেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি এসব প্রস্তাব ও মতামত গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণে অন্তর্ভুক্তির অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
ইমন সৈয়দ এই সময় বলেন, “ছাত্রদের ঐক্য, রাজনৈতিক চেতনা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এই অঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় পাহাড় ও সমতলের জনগণের সম্মিলিত শক্তি ও চেতনার প্রয়োজন। NCP পাহাড়ি–বাঙালি বিভাজন নয়, বরং সম্প্রীতি, সম্মান ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি নতুন রাষ্ট্রনৈতিক কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে।
এই উপলক্ষে আগামী দিনগুলোতে প্রতিটি উপজেলায় NCP-এর প্রতিনিধি দল সফর করবে, জনগণের মতামত ও সংকট শুনবে এবং সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে তুলবে।”
সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির রাঙ্গামাটিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দ্রুত বিস্তারের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ এবং বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP) বিশ্বাস করে যে, দেশের বৈচিত্র্যময় অঞ্চলগুলোর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক অধ্যায়। এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনৈতিক পরিবর্তন, ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তির নতুন অধ্যায় রচনা করা সম্ভব।
দেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গঠন এবং একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি সক্রিয়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সকল সচেতন নাগরিক, তরুণ সমাজ ও প্রগতিশীল চিন্তাশীল মানুষকে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যুক্ত হয়ে দেশ ও সমাজ গঠনের আন্দোলনে অংশগ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি সকল সচেতন নাগরিক, তরুণ সমাজ, ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক, শ্রমিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানায়— চলুন, আমরা একসাথে দেশ ও সমাজের পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হই। একটি বৈষম্যহীন, সাম্যভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের সংগ্রামে NCP হবে জনগণের রাজনৈতিক আশ্রয়স্থল।