সমাজ পরিবর্তনের মূল হাতিয়ার শিক্ষা। আর সেই শিক্ষাকে সম্মান জানাতে কক্সবাজারের পেকুয়ায় অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন—মাওলানা নুরুল হোছাইন চেয়ারম্যান স্মৃতি মেধাবৃত্তি পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণ ও এসএসসি জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এই আয়োজন শুধু একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান নয়; এটি একধরনের সামাজিক আন্দোলন, যা তরুণদের মেধা বিকাশে উদ্বুদ্ধ করছে এবং শিক্ষা-অগ্রযাত্রার দিশা দেখাচ্ছে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১ টায় পেকুয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জয়েকা নুর ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে এবং সাজ কনসাল্টেন্সি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় ১১৫ জন মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে সম্মাননা স্মারক, প্রাইজবন্ড এবং সনদপত্র প্রদান করা হয়। সাথে এসএসসি ২০২৫ সালে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৫০ জন শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় বিশেষ সংবর্ধনা। যাদের একাডেমিক কৃতিত্ব ভবিষ্যতে দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সমাজসেবক শাহাদাত হোছাইন ছিদ্দিকী। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “শিক্ষার্থীদের মেধাকে মূল্যায়নের এ উদ্যোগ একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে, অন্যদিকে সমাজেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এমন আয়োজন আরও বেশি হওয়া উচিত।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. কামাল হোসেন, রাজাখালী এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বিএসসি, পেকুয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছফওয়ানুল করিম, উজানটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম উল্লাহ চৌধুরী, পেকুয়া সরকারি মডেল জি.এম.সি. ইনস্টিটিউশনের সাবেক শিক্ষক রুহুল আমিন, বান্দরবান পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর মাহমুদুল হক প্রমূখ।
এর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্মরণে অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মিনিট নিরবতা পালন ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় সঞ্চালনায় ছিলেন গোঁয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ ইদ্রিস। এদিকে দ্বিতীয় অধিবেশনে পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হাসেমের সভাপতিত্বে ও মেধাবৃত্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাজ্জাদ হোছাইন ছিদ্দিকীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন, চকরিয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, পার্টেক্স গ্রুপের ডিজিএম বাবলা বিশ্বাস, পুবালী ব্যাংক পেকুয়া শাখার ব্যবস্থাপক একরাম উদ্দিন, বহাদ্দারকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন, পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুজিবুল হক চৌধুরী, পেকুয়া সরকারি মডেল জি.এম.সি. ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আসহাব উদ্দিন হৃদয়, এডভোকেট জেড. এম. মিনার উদ্দিন, ফৈয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের প্রভাষক নুরুল আমিন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামশু উদ্দিন, পেকুয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এম. দিদারুল করিম। এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জেলায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে সাফল্যের সাথে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী মোছাম্মৎ জয়া খতুন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
এ সময় মাওলানা নুরুল হোছাইন স্মৃতি মেধাবৃত্তি পরিক্ষার সদস্য সচিব ও পুর্ব উজানটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সোহরাব চৌধুরী, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রাং, সাংবাদিক এস.এম. জুবাইর, মো. আরকান, উপকূলীয় আইডিয়াল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এস.এম. শাহাদাত হোসেন শাহেদ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন ।
বক্তারা বলেন, প্রযুক্তির যুগে টিকে থাকতে হলে শুধু পাঠ্যবইয়ের গণ্ডিতে আটকে থাকলে চলবে না। ইংরেজি, আইটি দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে শিক্ষার্থীদের।অনুষ্ঠানটি প্রমাণ করে দিল—অঞ্চলিক পর্যায়ের মেধা চর্চা ও শিক্ষাবান্ধব সমাজ গঠনে স্থানীয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
মাওলানা নুরুল হোছাইন চেয়ারম্যানের নামে এই বৃত্তি কার্যক্রম ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত আকারে সারা উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানান আয়োজকরা। ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাজ্জাদ হোছাইন ছিদ্দিকী বলেন, “আমরা চাই, একটি শিক্ষিত, সুশিক্ষিত ও মূল্যবোধসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে উঠুক—এই বৃত্তি কর্মসূচি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।