রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের পূর্ব লাইল্যাঘোনা গ্রামে কাচালং নদীর ভাঙন প্রতিনিয়ত ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। নদীর পাড়ে বসবাসরত পরিবারগুলোর বসতভিটা ও রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ভয়াবহ ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে আরও অর্ধশতাধিক পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মানুষজন নদীর গা ঘেঁষে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একসময় যে জায়গাগুলো তাদের ঘর, উঠান বা চলাচলের পথ ছিল, সেগুলো এখন নদীর স্রোতে গিলে খেয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছর বছর নদীর ভাঙন বাড়লেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বর্ষা মৌসুমে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে, কারণ অল্প বৃষ্টিতেই সড়কপথ ডুবে যায় এবং গোটা এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের চলাফেরা হয়ে ওঠে দুরূহ ও ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় কৃষক মোঃ আফসার হোসেন জানান, আমরা কাপ্তাই বাঁধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে এখানে এসেছিলাম নতুন করে জীবন শুরু করতে। তখন এই নদীর পাড়ে অনেক খোলা জায়গা ছিল, চলাচলের রাস্তাও ছিল। কিন্তু এখন সবই নদীর নিচে চলে গেছে। আর যদি বাঁধ না হয়, তাহলে হয়তো বাকি জায়গাটুকুও থাকবে না।
দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বসবাস করা সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল খালেক বলেন, প্রায় ছয় দশক ধরে আমরা এই এলাকায় বাস করছি। আগে আমাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন নদীভাঙন ও জলাবদ্ধতা প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে ব্যক্তিগতভাবে ও কিছু সরকারি সহযোগিতায় ছোটখাটো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা টেকসই হয়নি। এখন জরুরি ভিত্তিতে শক্ত ও দীর্ঘমেয়াদি একটি বাঁধ নির্মাণ দরকার, না হলে এই গ্রাম নদী গর্ভে অচিরেই হারিয়ে যাবে।
এই গ্রামের দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার কথা তুলে ধরে স্থানীয় তরুণ ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। নদীর ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে গেছে। এখানকার মানুষদের জন্য নেই কোনো আশ্রয় কেন্দ্র, নেই উঁচু রাস্তা। এমন অবস্থায় গবাদিপশু নিয়ে কোথাও সরে যাওয়ার উপায় নেই। সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্য হলেও এখানে টেকসই বেড়িবাঁধ, উঁচু রাস্তা এবং একটি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।
বাঘাইছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল মাবুদ বলেন, কাচালং নদীর দুই পাড়ে বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। করেঙ্গাতলী থেকে শুরু করে দুরছড়ি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পাড় ধসে পড়ছে। নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢল সহজে প্রবাহিত হতে পারছে না, ফলে দুই পাড়ে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থায় দ্রুত প্রকল্প গ্রহণ না করলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘাইছড়ি উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাচালং নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা শনাক্ত করে জরিপ করেছি। পূর্ব লাইল্যাঘোনা এলাকায় একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশাকরি দ্রুতই অনুমোদন মিলবে এবং কাজ শুরু করা যাবে।