কক্সবাজারের কস্তুরাঘাটস্থ বাঁকখালী নদীর তীরে দ্বিতীয় দিনের মতো অবৈধভাবে দখল করে তৈরি করা স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন ও বিআইডাব্লিইটিএ। ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টার সময় অভিযানকালে অবৈধ দখলদারদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে আবদুল করিম নামের এক পুলিশের সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১০ টার দিকে শহরের কস্তুরাঘাট-খুরুশকূল সংযোগ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান শুরু করতে গেলে দখলদাররা বাঁধা দেয়। এ সময় তাদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে আবদুল করিম নামের এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। বাধাদানকারীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে আবদুল করিমের মাথা নিয়ে রক্ত পড়তে দেখা গেছে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান জানিয়েছেন, আহত পুলিশ কনস্টেবল আবদুল করিমকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে উন্নয়ন ইন্টান্যাশনাল নামক প্রতিষ্টানের কর্মচারী ছিদ্দিক, মুক্তার, আকিব এবং তার মা পারুলকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিআইডব্লিটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, উচ্ছেদ অভিযান দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩ একরের বেশি জায়গা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর সকালে বাঁকখালী নদীর ঠিক পাশেই উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্টানের দখলে থাকা বিপুল পরিমান জমি উদ্ধার করা হয়। পরে নদীর পাশে আরো শতাধিত স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ হতে পারে। প্রথম দিন উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার মালামাল ও ওখানে ভরাট করা মাটি ১৫ ফুট পর্যন্ত প্রকাশ্য নিলামে দেয়া হয়েছে। ৬ লাখ টাকায় নিলাম ডাককারী তা সরিয়ে নিয়ে নদীর আগের অবস্থান নিশ্চিত করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিনের উচ্ছেদের পর আবারও নিলাম দেওয়া হবে।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্থ বেশ কয়েকজন দাবী করেন, বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও কোন আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে জোর পূর্বক নদীর জমি বলে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এতে মূলত কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষতি করে সরকারি আমলাদের আবাসন ভবন করার পায়তারা করছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র মতে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটিএকে বাঁকখালী নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। প্রজ্ঞাপনে নদী তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। জমি বুঝিয়ে দিতে বার বার জেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা তা দেয়নি। ফলে নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় দখল অব্যাহত ছিল।
যার সূত্র ধরে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ০১ মার্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে ৬ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিন্তু পরে তা আবারও দখল হয়ে যায়। উচ্ছেদ করা প্যারাভূমিতে ফের নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা।
এরমধ্যে বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী ৪ মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ আগস্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে নদী দখল করে নির্মিত সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এরপর নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) কর্তৃপক্ষ কস্তুরাঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে উঠা স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। প্রথম দিনে বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সকালে দ্বিতীয় দিনের উচ্ছেদ শুরু করে। অভিযানে বিআইডব্লিউটিএর কর্মীদের পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।