রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় এক গভীর শোকের ঘটনা ঘটেছে। আজ (মঙ্গলবার) ১৪ অক্টোবর সকালে স্বামীর জন্য ওষুধ আনতে যাওয়ার পথে কেরন ছড়ি এলাকায় নদীর পথে নৌকা থেকে পানিতে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার তিন ঘণ্টা পর গৃহবধূ লতা মার্মার (৩৩) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় পরিবার ও পুরো উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহতের পরিচিতি ও ঘটনার বিবরণ:
নিহত লতা মার্মা (পিতা: প্রভাত চন্দ্র মার্মা) কেংড়াছড়ি পূর্ব পাড়ার শামুকছড়ি (৪নং ওয়ার্ড) বাসিন্দা এবং মিলন কান্তি চাকমার স্ত্রী। স্থানীয় সূত্র জানায়, আনুমানিক সকাল ৮:২০ ঘটিকায় তিনি অসুস্থ স্বামীর জন্য হার্টের ওষুধ আনতে তাঁর ভাসুরের দ্বিতীয় শ্রেণির সাত বছর বয়সী এক ছাত্রকে সাথে নিয়ে বিলাইছড়ি বাজার যাচ্ছিলেন। পথেই কেরনছড়ি ওয়ার্ড মেম্বার দয়ারঞ্জন ঘাটের কাছাকাছি এলাকায় নৌকা থেকে মাথা ঘুরে তিনি পানিতে পড়ে যান। সঙ্গে থাকা শিশুটি রক্ষা পেলেও লতা মার্মা তলিয়ে যান। শিশুটি স্থানীয়দের জানালে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় স্থানীয়রা জাল টেনে ব্যাপক তল্লাশির পর প্রায় ১১:২০ ঘটিকায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়।
পরে হাসপাতালে আনা হলে মেডিকেল অফিসার ডাঃ নুরুদ্দিন তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। তিনি আরো জানান স্থানীয় ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে সমবেদনা জানার জন্য ছুঁটে আসেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রামাচরন মার্মা (রাসেল), উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুজন বড়ুয়া এবং পিআইও অফিসের সুমন গাজী, মহিলা মেম্বার ও ওয়ার্ড মেম্বারগণ। এবং উপজেলা প্রশাসন পক্ষ হতে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লতা মার্মা তাঁর স্বামী এবং তিনটি সন্তান রেখে গেলেন। তাঁর বড় মেয়েটির বয়স ১৫ বছর, মেজ ছেলেটির বয়স ১১ বছর এবং ছোট মেয়েটির বয়স ২ বছর ৬ মাস। স্ত্রীর এমন করুণ পরিণতিতে তাঁর স্বামী মিলন কান্তি চাকমা এবং শ্বশুর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের হাসপাতালে ভর্তির সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামী মিলন কান্তি বারবার বলছিলেন, “আমার ছোট দুধের শিশুটি মা হারা হলো” মা হারা হলো, মা হারা হলো ! তাঁদের দু’জনকেই চিকিৎসার জন্য বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তিন সন্তানের জননী লতা মার্মার অকাল মৃত্যুতে বিলাইছড়ির উপজেলার প্রশাসন থেকে শুরু করে সকলে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।