পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এই বৈচিত্র্যময় অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানুষের জীবনমান রক্ষা এবং টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
আজ বিকালে রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা মজা করে বলেন, বাংলাদেশের কোথাও মাউন্টেইন দেখি না, দেখি শুধু হিল, এজন্য নামও রেখেছেন চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস- তাছাড়া এবার এর সাথে আপনারা আবার জুড়িয়ে দিয়েছেন গ্ল্যাছিয়ারস…হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসের এবছরের প্রতিপাদ্য Glaciers matter for water, food and livelihoods in mountains and beyond (”হিমবাহ গলনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি কার?/পাহাড়, জল, খাদ্য, জীবন ও জীবিকার”) যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে এমন মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। উপদেষ্টা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসের উপর এমন সুন্দর একটি সেমিনার রাজধানীতে আয়োজন করায় এর আয়োজকদের তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, বাংলাদেশের ৬১ জেলার সাথে তাল মিলিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের এই পরিবেশে সবকিছুই খাপ খাওয়ানো সম্ভব না। পাহাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকার ভিত্তি হলো এর নিজস্ব পরিবেশ। যুগ যুগ ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের খাপ খাওয়ানোর প্রবণতা আগে ছিল সহনশীল। ন্যাচারেলি যা কিছু ঘটে তা মানুষ টলারেট করতে পারে। যখনই ন্যাচারেলির পরিবর্তে সেখানে অন্য কোনো কৃত্রিমতাকে দাঁড় করানো হয়, তখনই ঘটে বিপত্তি-এমন মন্তব্য করেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
তিনি এ প্রসঙ্গে ২০১৭ সালে ঘটে যাওয়া ল্যন্ডস্লাইডকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ইকো ট্যুরিজমকে নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। তিনি কাপ্তাই লেক-এর সৌন্দর্য্য নষ্ট হওয়ার জন্য বর্তমান সময়কার অসচেতনতা ও অসাবধানতাকে দায়ী করেন। তিনি এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সকলের আচরণে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় দিবসটি আজ রাজধানীতে যথাযোগ্য মর্যাদায় উৎসবটি পালন করেছে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যতকে সামনে রেখে জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুল খালেক-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রাশিদা ফেরদৌস, অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুল ইসলাম, অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রজেক্টরের মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ফর ডেভেলপমেন্ট-এর সিনিয়র ইন্টারভেনশন ম্যানেজার ড. মোহাম্মদ ফারুক আজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটউট অভ ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর সাসটেইনেবল ফিন্যান্স এন্ড সাসটেইনেবেলিটি স্পেশালিস্ট খোন্দকার মোরশেদ মিল্লাত, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম।
আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসের তাৎপর্য নিয়ে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীগণের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম ও যুগ্মসচিব অতুল সরকার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোস্তফা কামাল, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক নাজমুল হুদা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য শহীদুল ইসলাম সুমনসহ অন্যান্য তাঁদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন।


















