মঙ্গলবার (২৪ মে) রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কিন্তু নিজেদের পক্ষে ভোট টানতে শেষ হয়নি প্রচার প্রচারণা। চলবে ২৪ মে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের আগ পর্যন্ত। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দুই মেরুতে বিভক্ত আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এবার সম্মেলনে ভোট হবে সভাপতি ও সম্পাদক পদে। নির্বাচিতরা অন্যদের নিয়ে বসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠাবেন। নির্বাচন নিয়ে যার যার সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে দুই মেরুতে বিভাজন হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।
শেষ মুহূর্তে কাউন্সিলরদের কাছে ছুটছেন সভাপতি প্রার্থী দীপংকর ও নিখিল। দৌঁড়াদৌঁড়ি তোড়জোড়ে রয়েছেন সম্পাদক প্রার্থী বর্তমান দায়িত্বে থাকা মো. মুছা মাতব্বর ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন।
মুছা দীপংকর প্যানেলে আর কামাল নিখিলের প্যানেলে। বিভাজনে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় অংশটি নিখিল প্যানেলে এবং অপর অংশসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলালীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অধিক নেতাকর্মী দীপংকর প্যানেলে অবস্থান নিয়েছে বলে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে।
সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মী সবাই উজ্জীবিত। বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনা নিয়ে সম্মেলনে যোগ দিতে প্রস্তুত জেলা, উপজেলাসহ তৃণমুলের নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ তথ্যমতে, এবার সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হতে হবে। এর আগে প্রতিদ্বন্ধী না থাকায় টানা ২৬ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন দীপংকর তালুকদার। একাধারে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে রাঙামাটির আসনে সংসদ সদস্য পদে এককভাবে দলীয় প্রার্থীও হয়ে আসছিলেন তিনি।
১৯৯১ সাল থেকে গত ছয়টি জাতীয় নির্বাচনে হেরেছেন দুইবার। জিতেছেন ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে। হেরেছেন ২০০১ সালে বিএনপির মণি স্বপন দেওয়ান এবং ২০১৪ সালে জনসংহতি সমিতির ঊষাতন তালুকদারের কাছে।
দলীয় পদবীতে জেলা সভাপতির পাশাপাশি দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিরও সদস্য দীপংকর। এছাড়া বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও।
দীপংকর বিরোধীদের বক্তব্য,
একজনের কাছে এতগুলো ক্ষমতা রেখে দিলে অন্যরা কী করবে? তাছাড়া দীর্ঘদিনের টানা নেতৃত্বে ক্ষমতার দাপট আর অহংকার বাড়িয়েছে দীপংকর। এতে দলীয় সবকিছুর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এককভাবে। ফলে বঞ্চনার শিকার দলের বড় অংশের সাধারণ নেতাকর্মীরা। এতবড় দল এত নেতাকর্মী- কিন্তু দলীয় কোনো রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই একই ব্যক্তি যাকে খুশি তাকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য নিয়োগ দিচ্ছেন। এসব পদে কেউ কেউ টানা তিন দফা মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন। ফলে তারা বেপরোয়াভাবে টেন্ডার ভাগাভাগি, চাকরিতে নিয়োগ, প্রকল্প বরাদ্দসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি স্বজনপ্রীতিতে জড়িত হচ্ছেন। এসবের বদৌলতে ক্ষুন্ন হতে চলেছে দলের ভাবমূর্তি। যে কারণে দলের ভেতর এখন ক্ষোভের প্রকাশ পাচ্ছে। তাই দলটির রাঙামাটির অবস্থান আর আগের মতো নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মী এখন নেতৃত্ব পরিবর্তনের পক্ষে। যার প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে এবার সম্মেলনে।
সূত্র জানায়, অধিকাংশই কাউন্সিলরের প্রস্তাবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নিজের প্রার্থিতার বিষয়টি প্রকাশ্য করেছেন বর্তমান সহ-সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা।
তিনি সম্মেলনে চ্যালেঞ্জ জানাবেন টানা ২৬ বছর ক্ষমতায় থাকা দীপংকরকে। ফলে শেষ পর্যন্ত দীপংকরকে অবতীর্ণ হতে হচ্ছে প্রতিদ্বন্ধিতায়। এত বছর পর এভাবে হঠাৎ তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতার সম্মুখীন হয়ে পড়ায় দীপংকরে চোখে এখন যেন সর্ষেফুল। ইতোমধ্যে দীপংকরের পক্ষে তাকে আরেকবার সুযোগ দিতে নিখিলকে বসে থাকার প্রস্তাবও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। কিন্তু যে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখেও তাতে কোনো ছাড় নেই বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন নিখিল ও তার সমর্থকরা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে- এর একমাত্র সিদ্ধান্ত হবে ভোটে।
দলীয় সূত্র মতে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটি পদেই তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। সম্পাদক প্রার্থী মুছা মাতব্বর বর্তমান দায়িত্বের পাশাপাশি জেলা পরিষদের সদস্য এবং কামাল উদ্দিন বর্তমানে সহ-সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে জমে উঠেছে রাঙামাটির রাজনীতি। উত্তাপ ছড়িয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলের ভেতরে বাইরে এখন সবার নজর এ সম্মেলনের দিকে। সম্মেলনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ।
এসব বিষয়ে দীপংকর তালুকদার বলেন,
কে কোন পদে কতজন প্রার্থী হবেন- তা সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেখা যাবে। একাধিক প্রার্থী হওয়া গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক দিক। এটা খারাপের না। এতে দলও শক্তিশালী হয়। আমাদের আসল লক্ষ্য- সম্মেলন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করা। আমাদের প্রস্তুতি শেষ। আবহাওয়া ভালো থাকলেও আর কোনো কিছুর বাত্যয় ঘটবে না।
অপর সভাপতি প্রার্থী নিখিল কুমার চাকমা বলেন,
আমি প্রতিদ্বন্ধিতার জন্য চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছি। কারও কোনো অনুরোধে বসাবসি নেই। সেই সময়টা এখন নেই। অনেক আগে তা চলে গেছে। হারজিত হবে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে। জয় নিয়ে আমি নিশ্চিত। আমি নির্বাচিত হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলকে সুসংহত ও সুসংগঠিত করতে আপ্রাণ চেষ্টায় থাকব।
দলটির জেলা কমিটির যগ্ম সম্পাদক মো. আব্দুল মতিন বলেন,
দীর্ঘদিন গণতন্ত্র চর্চার অভাবে এখানে দলের নেতৃত্বে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তৃত হয়েছে। টানা ক্ষমতায় থাকর কারণে বর্তমান একচ্ছত্র নেতৃত্বে একগুয়েভাব প্রকট হয়ে ওঠেছে। আচরণও ভয়াবহ। এর এখন একমাত্র মুক্তির উপায় নেতৃত্বের পরিবর্তন। বেশির ভাগ কাউন্সিলর এখন সেই পক্ষে।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. কামাল উদ্দিন বলেন,
আমি একজন প্রার্থী হিসাবে কাউন্সিলরদের কাছে নিজের ভোট চাচ্ছি। এছাড়া কারও পক্ষে ভোট চাইছ না। আমি এক সময় প্রায় চার বছর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলাম। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা কাউন্সিলরদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে আমার ভোট আমি চাচ্ছি। আমার কাছে অভিযোগ এসেছে আমার প্রতিদ্বন্ধী মুছা টাকা উড়াচ্ছেন।
অপর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মুছা মাতব্বর বলেন,
আমি দল থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। কাউন্সিলররা আমাকে সম্মান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, দীপংকর তালুকদারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি আরও একবার সম্পাদক পদে সুযোগ চাইতে কাউন্সিলরদের কাছে যাচ্ছি। যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। কেউ আমাকে নিরাশ করছে না।