স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।
না হলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো বৃক্ষশূণ্য হয়ে পড়বে। পানির উৎসগুলো ধংস হবে। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
রাঙামাটির বিলাইছড়ির রাইংখ্যং রিজার্ভ ফরেস্টের উপর সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত
নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি ও অংশীজনকে অবহিত করণ ও মতামত সংগ্রহের উপর এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে এ সেমিনার আয়োজন করে বন ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরন্যক ফাউন্ডেশন।
সেমিনার শুরুতেই রাইখ্যং রিজার্ভ ফরেস্টের উপর গবেষণার উপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার সরকার।
আরণ্যক ফাউন্ডেশন বিশ্ব ব্যাংকের প্রোগ্রীন গ্রান্ট এর অর্থায়নে ‘রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্ট এর ল্যান্ডস্কেপ মডেলিং ও ল্যান্ড ইউজ প্লান’ প্রণয়নের এ উদ্যোগ গ্রহণ করে।
সেমিনারে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক জনাব মো: আমীর হোসাইন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সভার সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি অঞ্চলের বন সংরক্ষক জনাব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রকিবুল হাসান মুকুল।
সভায় রেইংক্ষিয়াং বনের আশে পাশে বসবাসরত হেডম্যান ও কারবারি, বন বিভাগের কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, কর্ণফুলী পেপার মিলস, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট, হর্টিকালচার কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সেমিনারে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার সরকার।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, রিজার্ভের ভূমিরূপ গত কয়েক দশকে বেশ পরিবর্তিত হয়েছে এবং ওয়াটার শেড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেখানে এখন ২টি ইউনিয়ন আছে এবং ২৮টি পাড়া আছে। প্রায় ৩০০০ পরিবারের ১৫০০০ এর অধিক মানুষ এ রিজার্বের উপর নির্ভরশীল।
এ পর্যন্ত সংঘটিত বনের অবক্ষয় বন্ধ করে বন পুনরূদ্ধারের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন বেশ জটিল। কিন্তু সকলের সহযোগীতায় অবশ্যই একটি পরিকল্পনা করতে হবে।
তারা বনে বসতবাড়ি গড়ে তোলার পাশাপাশি জীবন জীবিকার তাগিদে সেখানে জুম চাষ, কৃষি, কলা, আম ও অন্যান্য ফলদ বাগান করে প্রাকৃতিক এ বনের ভুমিরূপ পরিবর্তন করে ফেলছে। এর ফলে বন থেকে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তবে তাদের দেয়া তথ্যে এও স্পষ্ট যে ধীরে ধীরে জুম চাষের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কিন্তু এখন তাদের অন্য কোন স্থানে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই তারা যেখানে আছে সেখানে স্থায়ী ভাবে ও আইনগত ভাবে থাকার অনুমতি চায়। তাদেরকে জুম ও ফল বাগানের জমি বরাদ্ধ করে বাকি জমি বন আচ্ছাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা করলে তারা বন রক্ষায় সহযোগিতা করবে। রিজার্ভ বনে বর্তমানে যতগুলো পরিবার আছে তাদের বাড়িঘর ও চাষের জমি রাইখ্যং রিজার্ভ ফরেস্টের প্রায় ২৫% জায়গায় বিস্তৃত।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক জনাব মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী।
তিনি বলেন, সরকার বন অধিদপ্তরকে বন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছেন। বন অধিদপ্তর কাউকে জমি বরাদ্দ দিতে পারে না। তবে যারা ইতিমধ্যে বনের ভিতরে বাস করছেন তাদের নিয়েই এ বন ব্যবস্থাপনা করে আপনাদের ও বনের আশেপাশে যারা বাস করছেন তাদের প্রাতিবেশ সেবা পুনরুদ্ধার করতে হবে। বন বিভাগ নিজেরাই সব করতো। কিন্তু আমাদের এখন বন ব্যবস্থাপনার মূল স্ট্র্যাটেজি হল জনগণকে সম্পৃক্ত করে বন তাদের উপকারের জন্য তা নিশ্চিত করা। বনের প্রতি তাদের মালিকানা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা।
তিনি বলেন, আরণ্যক ফাউন্ডেশন সে রকম একটি প্লান তৈরি করবে যা সকল অংশীদারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
সেমিনারে মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মঞ্জুর রশীদ। এ সময় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ডা. নিলু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. বরুন কুমার দত্ত, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ পরিচালক আপ্রু মারমা, রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, প্রোগ্রেসিভ নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমাসহ অনেকে।