নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি।
সন্ধ্যামনি চাকমা (৫৫)। রাঙামাটি সদরের শুকরছড়ি খামার পাড়া এলাকায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশে একটি শনের ছাউনি তৈরি করে সেখানে আখের রসের মেশিন বসিয়ে পথচারির অপেক্ষায় থাকেন। পথচারীরা গাড়ি থামিয়ে সন্ধ্যামনির বানানো আখের রস পান করেন।
পথের ধারে সন্ধ্যামনির আখের ক্ষেত। আখ শেষ হলে ক্ষেত থেকে আখ কেটে নিয়ে আনেন। পথচারি চাইলে এ আখ মেশিনে দিয়ে রস বের করে দেন সন্ধ্যামনি। এভাবে চলে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত। এ আয় দিয়ে সুখের সংসার চলে সন্ধ্যমনির। সন্ধ্যামনিকে সহায়তা করেন তার স্ত্রী।
সন্ধ্যামনি বলেন, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে আমার পরিবার। চারদিকে পাহাড় মাঝে প্রায় ৪০ শতক সমতল জমি। এখানে আগে ধান চাষ করতাম কিন্তু ফসল ভাল হত না।
একদিন রাঙামাটি ইক্ষু গবেষনা ইনস্টিটিউট থেকে একজন লোক সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে নেমে আমাকে আখ চাষের প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে আমি আখ চাষ করি। তারা আমাকে আখের বীজ, সার দেয়। এ আখ বিক্রি করতাম ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়।
পরবর্তীতে ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট আমাকে একটি আখ রসের মেশিন দেয়। এ মেশিন দিয়ে রাস্তায় আখের রস তৈরি করি। আস্তে আস্তে আমার স্টলে পথচারির ভিড় জমায়। এখন পথচারীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে একটি টয়লেট তৈরি করে দিয়েছি। এখন পথচারিরা নিয়মিত গাড়ি থামিয়ে রস পান করে। রোদ যেদিন বেশি পড়ে সেদিন আয় বেশি হয় বলেন সন্ধ্যামনি।
সন্ধ্যামনি আরো বলেন,
সরাসরি আখ বিক্রি করলে যে আয় হয় রস বিক্রি করলে তার থেকে ২-৩ গুণ বেশী হয়। আখ ক্ষেতের কোন আখ নষ্ট হয় না। বাকানো আখ রস তৈরি করা যায়। যা বাকানো অবস্থায় বিক্রি করা যায় না।
এদিকে সন্ধ্যামনি আখ রসের স্থলকে কেন্দ্র করে সেখানে বসেছে একটি ছোট বাজার। বিকাল বেলায় পাহাড়ে উৎপাদিত বিভিন্ন ফল ও সবজি নিয়ে বসেন স্থানীয়রা। অফিস থেকে ফিরার পথে পথচারিরা এসব কিনেন। কম দামে টাটকা ফল সবজি পেয়ে সন্তুষ্ট হন পথচারিরা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খুশি চাকমা বলেন, আমি প্রায় সময় সন্ধ্যামনির স্টলে ভিড় দেখি। এখন তার স্টলে নিয়মিত পথচারির সমাগম হয়।
নানিয়াচরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম (৪০) বলেন, চলার পথে আমাদের ক্লান্তি দূর করে সন্ধ্যামনি। আমার মত অনেকে এখানে থেমে রস পান করেন। আমিও আখের রস পান করি। যাওয়ার সময় বাসায়ও নিয়ে যাই। আমাদের কথা চিন্তা করে সন্ধ্যামনি একটি পরিষ্কার টয়লেট তৈরি করেছেন। তিনি আসলে একজন আদর্শ চাষী।
জেলা ইক্ষু গবেষণা কর্মকর্তা ধনেশ্বর তঞ্চঙ্গা বলেন,
পাহাড়ে অনেক এলাকা আছে যা আখ চাষের উপযোগী। এসব এলাকা দেখে আমরা চাষীদের আখ চাষে উৎসাহ দিচ্ছি। পাশাপাশি অন্যান্য সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি।